রাসেলসহ সে রাতে শহীদ শিশুদের কথা

জসীম মেহবুব :

 

পনেরই আগস্ট বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে দানবেরা। তার সাথে সাথে মানুষরূপি ভয়ংকর দানবেরা হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর ছোটছেলে শেখ রাসেলসহ পাঁচ শিশু কিশোরকে। কী অপরাধ ছিল ওই পাঁচ শিশু কিশোরদের? সেই কালোরাতে হত্যাকা-ের শিকার পাঁচ শিশু কিশোর হলো- বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেল, বেবি সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু ও আবদুল মঈন খান রিন্টু। শেখ রাসেল ছিল দশ বছরের নিষ্পাপ ফুটফুটে প্রাণবন্ত এক শিশু। ঢাকার ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটেরি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল সে। সারাঘরে টই টই করে ঘুরে বেড়াত সে। মার কাছে এটাওটা আবদার করত। ছোট্ট সাইকেলে টুংটাং শব্দ তুলে বাসার সামনে বাগানে ঘুরে বেড়াত। ঘুমুতে যাবার আগে বাবার পাশে এসে চুপটি করে শুয়ে পড়তো। কাছে টেনে নিতো বাবা। মাও থাকতো পাশে। বাবা-মার কাছে গল্প শুনে শুনে ঘুমিয়ে পড়ত রাসেল সোনা। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখত। বাবার মত বড় হবে সে। অনেক বড়। সারাদেশের মানুষ, দুনিয়ার মানুষ তাকে জানবে, চিনবে। কিন্তু ঘাতকেরা তার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি। শেখ রাসেলের মর্মান্তিক জীবন কাহিনী নিয়ে ১৯৭৮ সালে লেখক মিজানুর রহমান মিজান এর একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। সেই বইটির নাম ‘আমি রাসেল বলছি’। এই বই পড়লে চোখের জল বাঁধ মানে না।

আর এক নিষ্পাপ কিশোরী বেবি সেরনিয়াবাত। সে ছিল একই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। রাসেলের খেলার সাথী ছিল বেবি। তার বাবা আবদুর রব সেরনিয়াবাত। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি এবং মন্ত্রিসভার সদস্য। তারই ছোট ভাই আরিফ সেরনিয়াবাত। সেও ছিল ল্যাবরেটেরি হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। আরেক শিশু সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু। সুকান্ত হলো হাসনাত আবদুল্লার বড় ছেলে। বাবুর বয়স ছিল মাত্র চার বছর। অন্য কিশোরটির নাম হলো আবদুল মঈন খান রিন্টু। সেইদিন রিন্টু বেড়াতে এসেছিল আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায়। রিন্টু সেই বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। জননেতা আমির হোসেন আমুর খালাতো ভাই ছিল রিন্টু। এই পাঁচ শিশু কিশোরকে ঘাতকেরা সেই দিন নির্মমভাবে হত্যা করে। ঘাতকদের আচরণের কথা ভাবলে শরীরের রক্ত হিম হয়ে যায়। শেখ রাসেল বাঁচতে চেয়েছিল। অনেক কাকুতি মিনতি করে জানিয়ে ছিল সে   ‘ আল্লাহর দোহাই লাগে তোমরা আমাকে মেরো না। আমাকে জার্মানিতে বড় আপুর কাছে পাঠিয়ে দাও ।’  কিন্তু ঘাতকেরা তার সেই আকুতি শোনেনি। দশ বছরের নিষ্পাপ ফুটফুটে শিশুর কান্নায় তাদের মন একটুও গলেনি।

শিশুরা হলো ফুলের মত সুন্দর নিষ্পাপ আর পবিত্র । এই নিষ্পাপ শিশুদের যারা হত্যা করেছে, তাদের প্রতি আমাদের প্রচ- ঘৃণা ছাড়া কী দেবার আছে ? ওরা মানুষ নয় । ওরা নরকের কীট। এই নরকের কীটদের যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে তাদের প্রতিও রইলো আমাদের প্রচ- ঘৃণা। মানুষরূপী সেইসব পশুরা শিশুদের হত্যা করে যে অপরাধ করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। আমরা তাদের ক্ষমা করতে পারি না। পৃথিবীর কোন মানুষ তাদের ক্ষমা করতে পারে না। ক্ষমা করতে পারে না ফুল পাখি প্রজাপতি । ক্ষমা করতে পারে না আকাশ, বাতাস, নদী, সাগর ও প্রকৃতি। পৃথিবীর কোন প্রান্ত থেকে তাদের ক্ষমা নেই।

রাসেলের জন্মদিনে আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা জানাই বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর আর কোন দেশে যেন এই রকম নির্মম হত্যাকা- না ঘটে। আমরা শিশুদের ভালোবাসি। সারা পৃথিবী হোক শিশুর স্বর্গরাজ্য। শিশুরা যেখানে হাসবে খেলবে আর ঘুরে বেড়াবে মুক্ত বিহঙ্গের মত। পঙ্খীরাজের পিঠে চড়ে ওরা ভেসে বেড়াবে আকাশে বাতাসে। তাদের হাসিতে বাগানে ফুটবে হা¯œাহেনা, চাঁপা, বেলি ও রজনীগন্ধা। প্রজাপতি ডানা মেলবে ফুলবাগানে। পরিরা এসে তাদের কানে কানে কথা বলবে। তবেই না আমরা ভালো থাকবো। ভালো থাকবে সারা পৃথিবী। কেননা শিশুরাই আগামীর কর্ণধার।