বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক পরিসরে যেসব মানুষ খুব বিপদে আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘রাষ্ট্রহীন মানুষ’। বিশ্বজুড়ে প্রায় ষাট লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়াও কোটি কোটি রাষ্ট্রহীন মানুষ রয়েছে, যাদের জাতীয়তা অস্বীকার করা হয়েছে এবং তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান ও চলাফেরার স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকারের অভাব রয়েছে নিজ দেশেই। কোন কোন দেশ ও অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত এসব রাষ্ট্রহীন মানুষ কোথাও শরণার্থী আবার কোথাও নিজ দেশেই পরবাসী ও নিষ্ঠুরতার শিকার। যেমন ফিলিস্তিনি, রোহিঙ্গা, কুর্দিসহ আরও অনেক জাতিগোষ্ঠী।
বিশ্বের অন্যতম নিপীড়িত সংখ্যালঘুগোষ্ঠী হিসেবে রোহিঙ্গাদের বিবেচনা করা হচ্ছে, বাস্তবেও এরা রাষ্ট্রহীন। জাতিসংঘের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরাও একমত হয়েছেন, এই রাষ্ট্রহীনতা রোহিঙ্গাদের অনিশ্চিত পরিস্থিতিকে আরো বাড়িয়ে তুলছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন করে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। এটা শুরু হয় ২০১৩ সাল থেকে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমার তার নাগরিক হিসেবে স্বীকার না করায় বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে তারা স্টেটলেস (রাষ্ট্রহীন)। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ‘রাষ্ট্রহীন’ এখন বাংলাদেশে।
সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসাবে ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশে রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩০০। গত বুধবার (১৪ জুন) ইউএনএইচসিআর প্রকাশিত ‘২০২২ সালের বৈশ্বিক জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির প্রবণতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য রয়েছে।
২০১৬ সালে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য করে মিয়ানমার। ওই দেশটিতে এখনো ছয় লাখ ৩০ হাজার রাষ্ট্রহীন মানুষ আছে। তারা মূলত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। রাষ্ট্রহীন মানুষের উপস্থিতির তালিকায় মিয়ানমার আছে তৃতীয় স্থানে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইভরি কোস্টে রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা ৯ লাখ ৩১ হাজার ১০০।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। আবার একই সময়ে বাংলাদেশিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয়লাভের চেষ্টা করছে। গত বছর প্রায় ৩৮ হাজার ৯০০ বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয়ের আবেদন করেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সবাইকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের শরণার্থী হিসেবে গণ্য করে থাকে। ইউএনএইচসিআরের আরেক হিসাবে দেখা গেছে, বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ৭৬ শতাংশকেই আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশের মতো নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো।
এ মুহূর্তের সংবাদ