সুপ্রভাত ডেস্ক »
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে পদত্যাগে বাধ্য করা বা অপসারণের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের প্রশ্নে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতেই বিষয়টাতে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
আলোচনায় একাধিক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের ব্যাপারে ছাত্রদের দাবি রয়েছে। অন্যদিকে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে এবং সেটা তারা চায় না। এ পরিস্থিতি আলোচনা করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর ফলে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সমাধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
পদ ছাড়ার চাপ থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্যে আপাতত বঙ্গভবন ছাড়তে হচ্ছে না রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে! যদিও তাঁকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ এখনও প্রশমন হয়নি। রাষ্ট্রপতি প্রশ্নে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও। বুধবার দুপুরে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় গিয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বিএনপি এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে ‘নতুন সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক জটিলতা’ সৃষ্টির বিপক্ষে দলীয় অবস্থানের কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানায়। তবে সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিএনপির এই অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে পাঁচ দফা দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিন কত সময় টিকতে পারবেন, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মো. সাহাবুদ্দিনকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে নতুন মুখ খুঁজতে সরকারের তরফ থেকে নানামুখী তৎপরতা চালানো হয়েছিল। ছাত্রনেতারা ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি পদে আনতে চাইলেও সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প ব্যক্তিরও সন্ধান করা হয়। এমনকি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের কাছে রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব করা হলেও তিনি রাজি হননি বলে খবর বেরিয়েছে। এ ছাড়া নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে একাধিক গ্রহণযোগ্য সাবেক প্রধান বিচারপতির নাম নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন আছে।
সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে ফেরার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আবারও আলোচনা হতে পারে। সেখানে আসতে পারে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় রাষ্ট্রীয় সফর শেষে শুক্রবার তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
মো. সাহাবুদ্দিনকে ‘পদত্যাগে বাধ্য করা বা অপসারণের জন্য নতুন পদক্ষেপে’ বিএনপি রাখঢাক না রেখেই তার অবস্থান জানিয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদে থাকার অধিকার হারিয়েছে মত দিলেও তাঁর পদত্যাগ প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামীর জোরালো দাবি নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের (ইমপিচমেন্ট) মাধ্যমে অপসারণ করতে অবশ্যই সংসদ লাগবে। দ্বাদশ সংসদ বিলুপ্তির কারণে সেটি সম্ভব নয়। রাষ্ট্রপতিকে অপসারণে ভিন্ন কোনো পদ্ধতির বিষয়ে নির্দেশনা বিদ্যমান সংবিধানে নেই। সংবিধানের আলোকে মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ করতে হলেও স্পিকারকে প্রয়োজন। কিন্তু ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পদত্যাগে স্পিকারের পদটিও এখন শূন্য। এ ক্ষেত্রে তিনি কার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন, সেটিও অস্পষ্ট।
বিএনপি-জামায়াতের দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের প্রতি বিশেষ কোনো অনুকম্পা বা সহানুভূতি তাদের নেই। তবে এই ইস্যুতে এ মুহূর্তে দেশে সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হোক, এটা বিএনপি চায় না। দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিকেলে গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা সৃষ্টি করতে ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা চক্রান্ত করছে।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি পদে ছাত্র নেতাদের পছন্দের তালিকায় ড. ইউনূস থাকলেও বিএনপি-জামায়াতের পছন্দ বিকল্প গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। একই ব্যক্তির হাতে রাষ্ট্রের শীর্ষ দুই পদ (রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী) তুলে দিতে আপত্তি রয়েছে তাদের। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের গতিতে বিএনপি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করে সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ আশা করছে তারা। এসব বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ার নতুন করে রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে জটিলতার বিরুদ্ধে দলটি।