নিজস্ব প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি »
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, রামগড়-সাব্রুম সীমান্তে ইমিগ্রেশন চালু করার ব্যাপারে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে শীঘ্রই রামগড়-সাব্রুম সীমান্তে ইমিগ্রেশন চালু হবে। এ সরকারের মেয়াদেই রামগড় স্থলবন্দর চালুর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ ও ভারতের মৈত্রী অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। সেজন্য কিছুদিনের মধ্যেই প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ সম্পন্ন করার প্রস্তুতি অব্যাহত আছে।
গতকাল রামগড় উপজেলায় স্থলবন্দর উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন রামগড়বাসীর যে স্বপ্ন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মানুষের দেশ যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে এই মৈত্রীসেতুর স্থলবন্দর। এই সেতুর মধ্যদিয়ে দুই দেশের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
তিনি বলেন, আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি। শুধু ব্যবসা বাণিজ্য নয় ভারতের সাথে আমাদের আন্তরিকতার সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সাথে ভারতের ত্রিপুরার মানুষ আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে পাশে ছিলো। রামগড় স্থলবন্দর চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন সহ দুই দেশের পারস্পরিক বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে, সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে।
তিনি খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের ত্রিপুরার সাথে স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে অধিগৃহীত ভূমি, নির্মাণাধীন অবকাঠামো ও মৈত্রীসেতু পরিদর্শনে এসে মতবিনিময় সভায় আরো বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের সংগ্রামের প্রাক্কালে বৈষম্যহীন যেই বাংলাদেশের দর্শন এঁকেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একে একে সেসব স্বপ্ন পূরণের মধ্য দিয়ে আমরা একটা কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
রামগড়স্থ বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু’র নিকটে একটি অস্থায়ী মঞ্চে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আলমগীর।
সভায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু ও রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) সারোয়ার আলম বক্তব্য রাখেন।
এসময় রামগড় বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার মাজহার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী মো. আলিম উল্লাহ, রামগড় উপজেলার চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার ত্রিপুরা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মো. ইখতেয়ার উদ্দীন আরাফাত, রামগড় পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম কামাল, রামগড় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোস্তফা হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম আলিম উল্লাহ, রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুজ্জামান ও খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এসময় মৈত্রী সেতু এবং স্থল বন্দর নির্মাণ এলাকা ঘুরে দেখেন। বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর ও প্রকল্প পরিচালক সারোয়ার আলম রামগড় স্থল বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে ব্রিফিং দেন।
উল্লেখ্য, রামগড় স্থলবন্দরে আন্তর্জাতিক মানের টার্মিনাল, ট্রাক টার্মিনাল, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসসহ অবকাঠামো নির্মাণে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। রামগড়ে স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে রামগড়ের মহামনি সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু-১ গত বছরের ৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। ভারতের অর্থায়নে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণে এ বছরের ১০ জানুয়ারি ১২৫ কোটি টাকা ব্যায় নির্ধারণ করা হয়। বন্দর এলাকার জন্যে প্রথমে ১০ একর পরে আরো ১৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণকৃত ভূমিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে ২০২৪ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ বুঝিয়ে দিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মনিকো লিমিটেডকে দায়িত্ব দেয় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।