রাফার রংতুলি ও রঙিন স্বপ্ন

হানিফ রাজা »

এক গ্রামে রাফা নামের একটি মেয়ে ছিল। তার বাবা ছিলো গরিব, অন্যের বাড়িতে কাজ করতো। কোনো রকমে তাদের সংসার চালাতো। রাফা ছিল খুব বুদ্ধিমতী এবং প্রতিভাবান। সে পড়াশোনার পাশাপাশি ছবিও আঁকতে পছন্দ করতো, কিন্তু তার কাছে ছিল মাত্র একটা পুরাতন রং তুলি, যেটা তার বাবা অনেক কষ্ট করে অনেকদিন আগে জন্মদিনে তাকে উপহার দিয়েছিল, যা তার ছবি আঁকাআঁকিতে শুরুতে সাহায্য করেছিল।
একদিন, রাফা ঠিক করল যে, সে গ্রামের একটি পুকুরের ছবি আঁকবে। পুকুরটি ছিল গ্রামের কেন্দ্রবিন্দু তার চারপাশে ছিল গাছপালা, ফুল, এবং পাখির কিচিরমিচির। রাফা খুব আগ্রহের সাথে ছবি আঁকার চেষ্টা করল, কিন্তু যখন সে আঁকতে শুরু করল, তখন সে বুঝতে পারল তার রং তুলিটির রং কমে এসেছে।
তবুও, সে আশা হারাল না। ভাবল, “পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই একটি সুন্দর ছবি তৈরি করা যায়।” সে দিনরাত চেষ্টা করে গেল এবং অল্প অল্প করে ছবিটি তৈরি করতে লাগল। ছবির প্রতিটি বিন্দুতে সে তার অনুভূতি ও স্বপ্নের রঙ লাগাতে থাকল।
কিছুদিন পর, সে ছবি আঁকা শেষ করলো, কিন্তু রং তুলি ছিল পুরনো ও নিষ্প্রাণ। রাফা খুব হতাশ হল। আর ভাবতে লাগল, “আমি কী করতে পারি!” তখন সে সিদ্ধান্ত নেয়, বন্ধুদের কাছে যাবে, আর তাদেরকে জানাবে তার স্বপ্নের ছবি আঁকার কথা।
বন্ধুরা যখন ছবি দেখতে আসল, তারা ছবিটি দেখে অবাক হয়ে যায়। রাফার মেধা, কঠোর পরিশ্রম ও স্বপ্ন দেখে রাফাকে বলে, “আমরা তোমার এই প্রতিভার মূল্য বুঝি। তোমার ছবির জন্য নতুন রং তুলি ও আসবাব সবকিছু আনতে আমরা সাহায্য করব।”
রাফার চোখে আনন্দে অশ্রু এসে গেল। সে বুঝতে পারল যে, শিল্প শুধুমাত্র সরঞ্জামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি অন্তরের গভীরতায় দাগ কাটে। নতুন রং তুলি পেলেও, রাফা জানত প্রকৃত রঙ তার চেষ্টা এবং প্রেমেই ছিল।
এখন, সেই নতুন রং তুলি দিয়ে রাফা আরও অসংখ্য ছবি আঁকার সুযোগ পেল। সে বন্ধু ও অন্যান্য ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরও ছবি আঁকার জন্য অনুপ্রাণিত করল। তার শিল্পী হৃদয় গ্রামের প্রতিটি কোণে আলো ছড়িয়ে দিল।
এভাবেই, রাফা তার রং তুলির মাধ্যমে শুরু করল জীবনের নতুন অধ্যায়ের যাত্রা। যেখানে তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে আরো আগ্রহী হয়ে উঠল । তার ছবিগুলো হলো মানুষের হৃদয়ের গল্প, যা রঙিন এবং জীবন্ত যেন সকলের মাঝে।