সুপ্রভাত ডেস্ক »
১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমন্ত্রণে চট্টগ্রামে আসেন তখনকার আরব আমিরাতের বাদশা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। এ সময় তিনি হেলিকপ্টারে চড়ে কর্ণফুলী নদীর তীরে রাঙ্গুনিয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশে সুবিশাল জায়গাটি দেখে সেখানে একটি প্রাসাদ ও অবকাশ যাপন কেন্দ্র নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
আমিরাতের বাদশার পছন্দ ও ইচ্ছা অনুযায়ী এরশাদ সরকার মাত্র ১০১ টাকা প্রতীকী মূল্যে তাকে চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ও বেতাগি ইউনিয়নের গুনগুনিয়া সীমান্তবর্তী ১১০ একর পাহাড়ি জমি হস্তান্তর করেন।
এ জন্য পাহাড়ি ওই জমিটি সমতলও করা হয়। নির্মাণ করা হয় নিরাপত্তা দেয়াল। প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হীরামন অ্যাসোসিয়েটস উপশহর নির্মাণের কাজও শুরু করে।
উপশহরের প্রবেশপথ চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের তিন চৌদিয়া এলাকায় নির্মাণ করা হয় রাজকীয় তোরণ। দেড় কিলোমিটার ভেতরে অবকাশ যাপন কেন্দ্রের সামনে গড়ে তোলা হয় আরও একটি তোরণ। দক্ষিণ পাশে কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে প্রবেশ মুখেও করা হয় তোরণ।
১৯৯৭ সালের শেষের দিকে আরব আমিরাতের তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল প্রথম পর্যায়ে কাজ পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তারা নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম দেখে অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যান।
২০০৪ সালে উপশহর পরিত্যক্ত ঘোষণা করে চলে যায় শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ট্রাস্ট। সেই থেকে বন্ধ হয়ে যায় উপশহরের নির্মাণকাজ। ২০০৫ সালে মারা যান সুলতান আল নাহিয়ান।
প্রায় ১৮ বছর পর সেই পরিত্যক্ত উপশহরে মাল্টিপারপাস স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও আন্তর্জাতিক মানের সুপার স্পেশালাইজড নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপনে আবার এগিয়ে এসেছে শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ট্রাস্ট।
নার্সিং ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল গত বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে।
এই দলে স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এডিজি মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব চৌধুরী, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেব প্রসাদ চক্রবর্তীও ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার আলী হুমাইদ আলদিরি ও প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ মুবারক আল মেহরিবি রাঙ্গুনিয়া সফর করেন।
এ সময় হাসপাতালসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নির্মাণে স্থানীয়দের আগ্রহে অভিভূত হন তারা।
তারও আগে ২০১৪ সালে আরব আমিরাতের শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ সংস্থা আরটেক এর প্রধান প্রকৌশলী আসাদ আল খিলালি ও প্রকৌশলী ওয়ায়েল প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছিলেন। সে সময় তারা ১১০ একরের প্রকল্প এলাকায় ২৫ হাজার বর্গফুটের হাসপাতাল নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করেছিলেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ১১০ একর পরিত্যাক্ত জমিতে প্রাথমিকভাবে ৬৪ শয্যা দিয়ে হাসপাতাল শুরু হবে। পরে তা ১২০ শয্যায় উন্নীত হবে।
হাসপাতালে আধুনিক গাইনি সেবা নিশ্চিত করতে একটি অপারেশন থিয়েটারকে সার্বক্ষণিক দুজন সার্জনসহ প্রস্তুত রাখা হবে। অপর আর একটি অপারেশন থিয়েটার ব্যবহৃত হবে জেনারেল সার্জারির জন্য।
মা ও শিশুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের উন্নত হাসপাতালগুলোর মতো এই হাসপাতালেও সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।