খোঁজ মেলেনি পরিবারের
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি :
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় সেনাবাহিনীর টহলে হামলায় এক সেনাসদস্য আহত হওয়ার পর পাল্টা হামলায় নিহত দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে নানিয়ারচর থানা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে মরদেহ উদ্ধারের পর বুধবার সকালে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে তাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনো নিহতদের পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এখনো মরদেহ পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত সেনাসদস্য শাহাবুদ্দিন চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এ চিকিৎসাধীন আছেন।
মঙ্গলবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মঙ্গলবার বেলা পাঁচটার দিকে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট এলাকায় রাঙামাটি সেনাজোনের একটি টহলদল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইউপিডিএফের (প্রসিত গ্রুপ) সশস্ত্র চাঁদাবাজদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ইউপিডিএফের চাঁদাবাজরা সেনাটহলের উপস্থিতি টের পেয়ে পার্শ্ববর্তী একটি টিলার ওপর থেকে আচমকা গুলিবর্ষণ শুরু করে। সেনাটহলে থাকা সেনাসদস্যরা এক পর্যায়ে পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। গুলি বিনিময়ের ঘটনায় ঘটনাস্থলে ইউপিডিএফের দুইজন সশস্ত্র চাঁদাবাজ নিহত হয় এবং সন্ত্রাসীদের গুলিতে সেনা টহলের সৈনিক শাহাবুদ্দিন নামে একজন সদস্য বাম কাঁধে গুলিবিদ্ধ হন। সেনাসদস্যরা পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে গুলিসহ সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত একটি একে-২২ এসএমজি উদ্ধার করে। আহত সেনাসদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে রাতেই চট্টগ্রাম সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়েছে।’
এদিকে বুধবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নিহত দুজনের একজনকে নিজেদের দলের সদস্য ও অন্যজনকে সাধারণ জেলে দাবি করেছে প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। ইউপিডিএফ নিহতদেরও পরিচয় প্রকাশ করেছে। নিহতরা হলেন- রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার আঝাছড়ি গ্রামের মনোরঞ্জন চাকমার ছেলে ইউপিডিএফ সদস্য আশাপূর্ণ চাকমা ওরফে রকেট (২৮) ও সদর উপজেলার বন্দুকভাঙা ইউনিয়নের ধামেইছড়া গ্রামের বাসিন্দা সুসেন মনি চাকমার ছেলে সম্ভু চাকমা (৩৫)।
বিবৃতিতে ইউপিডিএফের রাঙামাটি ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা পুরো ঘটনাকে ‘নাটক’ দাবি করে বলেছেন, মঙ্গলবার বিকালে নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট এলাকায় ইউপিডিএফের এক সদস্যসহ দুইজনকে পরিকল্পিতভাবে কথিত ‘গোলাগুলির’ নাটক সাজিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধের লক্ষে ইউপিডিএফ যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তা বানচাল করতেই আবারও ‘বিচারবহির্ভুত’ হত্যাকা-ের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে এই ইউপিডিএফ নেতা ‘কথিত গোলাগুলি’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানান।
রাঙামাটির নানিয়ারচর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার কামাল জানিয়েছেন, ‘নিহত দু’জনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে আনা রয়েছে। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে এখনো কারো পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। যদি কেউ মরদেহ দাবি না করে, তাহলে বেওয়ারিশ হিসেবে দাহক্রিয়া করা হবে। একইসঙ্গে মামলার প্রক্রিয়া চলছে’ বলেও জানান তিনি।