শফিউল আলম, রাউজান প্রতিনিধি
চারদিকে হলুদ রঙের ফুল আর ফুল। দূর থেকে দেখলে মনে হয় বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলেই দেখা মিলে হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুলের হাসি। সূর্যমুখী ফুলের মনমাতানো পাগল করা ঘ্রাণ বাতাসে সৌরভ ছড়াচ্ছে। মৌমাছিরাও ছুটছেন মধু আহরণে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে। সূর্যমুখী বাগানে না গেলে বোঝাই যাবে না, কী অপরূপ দৃশ্য মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়, রাউজান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার বিভিন্ন বিলে। রাউজানে সূর্যমুখীর চাষ খুব ভালো হয়েছে। এক একটি সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য যে কারো নজর কাড়বে। প্রতিদিন এসব সূর্যমুখী বাগানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। দুপুরের পর থেকেই সূর্যমুখী বাগান নানান বয়সী মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। বাগানে কেউ ছবি, কেউ সেলফি তুলছে, আবার অনেকে সেই ছবি বা সেলফি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও শেয়ার করছেন। আবার কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে বাগানে এসে সৌন্দর্য উপভোগ করেন। রাউজানের সূর্যমুখী বাগান গুলোতে এখন চলছে দর্শনার্থীদের আনন্দ উৎসব। কৃষক নিজাম উদ্দিন জানান, ‘চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের গশ্চি নয়ারহাট এলাকার বিলে প্রায় আড়াই একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। কৃষি কর্মকর্তারা প্রায় সময় এই ক্ষেত পরিদর্শন করে পরামর্শ দেন। তাদের সহযোগিতায় কৃষি কাজে আরো বেশি উৎসাহ পাচ্ছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন জানান, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার বিভিন্ন বিলে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। এরমধ্যে বেশি হয়েছে ডাবুয়া, হলদিয়া, পূর্ব গুজরা, পশ্চিম গুজরাতে। এবছর ১৩ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। বর্তমান অর্থবছরে বীজ হবে প্রায় ৪০ থেকে ৪২ মেট্রিক টন এবং তেল উৎপাদন হবে ১৪ থেকে ১৫ মেট্রিক টন। গত বছর হয়েছিল ছয় হেক্টর। তেল উৎপাদন হয়েছিল ৬ থেকে ৭ মেট্রিক টন। এর আগের বছর চাষ হয়েছিল দেড় হেক্টর জমিতে।
তিনি আরো জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যাওয়াতে এলাকার চাহিদা পূরণে কৃষকদের অনুপ্রাণিত করেছেন সূর্যমুখী ও সরিষা চাষে। তার অনুপ্রেরণায় ও কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় প্রতি বছর চাষ বাড়ছে। তিনি আরো জানান, এ বছর সূর্যমুখীর বীজ সহ ৩৩ প্রকার বীজ হতে তেল ভাঙ্গানোর জন্য দুইটি মেশিন দিয়েছেন। একটি পৌরসভায় আরেকটি নোয়াপাড়ায়। বর্তমানে সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা সম্পর্কে মানুষ অনেক জানছে এবং সঙ্গত কারণে চাষও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে অনেকেই বাগানে ঢুকে ফুল ও গাছ নষ্ট করে ফেলে। কৃষকদের ফুল ও বাগান নষ্ট না করে বাগানের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য অনুরোধ করেন তিনি।