রাউজানে শীতকালীন সবজি চাষে সফল কৃষকেরা

রাউজানের শরীফ পাড়ায় সবজি ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন কৃষক আবু তাহের

শফিউল আলম, রাউজান  »
চট্টগ্রামের রাউজানে কাঁশখালী খালের দুই পাড়ের ফসলি জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। এখন স্থানীয় হাট-বাজারে আগাম শীতকালীন শাক-সবজি ভরপুর। দামও একটু বেশি পাচ্ছেন। তবে হাট-বাজারে আগাম শাক-সবজির ভালো দাম পেয়ে তারা শীতকালীন সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের শরীফ পাড়া, টেউয়া হাজী পাড়া, ছিটিয়া পাড়া, দাশপাড়া এলাকার শতাধিক কৃষক-কৃষাণী কাঁশখালী খালের দু’পাড়ে ৫০ একর ফসলি জমিতে নানা রকমের শীতকালীন শাক-সবজির চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে আগাম কিছুু সবজি উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করছেন কোন কোন কৃষক। উৎপাদিত এসব শাক—সবজির মধ্যে রয়েছে মুলা, শিম, বেগুন, লাউ, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, করলা, বরবটি, ঝিঙা, গুড়া কচু, কুড়ি কচু, ছড়া কচু, দুলি কচু, বন্নি কচু ইত্যাদি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাউজানের শরীফপাড়া, টেউয়া হাজীপাড়া এলাকার কৃষকেরা কাঁশখালী খালের দুই পাড়ের ফসলি জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, করলা, বেগুন, লাউ, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচামরিচ, পালং শাক, লাল শাক, দেশি টমেটোসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি মাঠে চাষ করছেন কৃষকেরা। প্রখর রোদেও সবজির ক্ষেতে কাজ করছেন তারা। এ অঞ্চলের জমিগুলোতে সারাবছরই সবজি চাষ হয়ে থাকে। এ কারণে এই কাঁশখালী এলাকা রাউজানের শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত। শস্যভাণ্ডার খ্যাত এই এলাকা থেকে বছরে কোটি টাকার শীতকালীন সবজি উৎপাদিত হয়। যা রাউজানের সবজি খাতের চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও বিক্রি হয়।
কৃষক মোহাম্মদ লোকমান জানান, তিনি বর্তমানে ১০ শতক জমিতে শীতকালীন লাউ চাষ করেছেন। তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। এপর্যন্ত স্থানীয় হাট বাজারে ৩০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। আরও ২০-৩০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন তিনি।
কাঁশখালীর কৃষক আবু তাহের বলেন, বর্তমানে ১৫ শতক জমিতে লাউ চাষ করতে আমার ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এপর্যন্ত বাজারে ২০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি। আশা করছি আরও ৩০ হাজার টাকা লাউ বিক্রি করতে পারবো। আগাম উৎপাদিত লাউ বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পেরে আমি খুশি।
কৃষক আব্দুর শুক্কুর জানান, তিনি প্রতি বছর দুই একর ফসলি জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেন। এছাড়া লালশাক, গুঁড়া কচু, বরবটি উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, শীতকালীন সবজি চাষে খরচ এবং পরিশ্রম একটু বেশি হয়। তবে সময়ের চেয়ে অসময়ে সবজি বিক্রি করে বেশি লাভ পাওয়া যায়। তাই আমরা এসব সবজি একটু আগে—ভাগে চাষ করি।
রাউজান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুম কবির বলেন, রাউজানে কাঁশখালী এলাকায় শীতকালীন শাক সবজির আগাম চাষ ভালো হচ্ছে। এই এলাকায় ৫০ একর জমিতে প্রতি বছর নানা রকমের সবজি উৎপাদন করে থাকেন কৃষকরা। আগাম উৎপাদিত সবজি শিম, লাউ, মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বাজারে চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার সেগুলো বেশি দামে বিক্রিও করতে পেরেও খুশি কৃষকেরা। আগাম সবজি চাষে আগ্রহীদের মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আশা করছি আগামীতে এই সবজি চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে রাউজানে।
তিনি আরও জানান, গত বছর রাউজান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে প্রায় ১৪’শত ৫০ হেক্টর জমিতে নানা রকমের শীতকালীন সবজি চাষাবাদ হয়েছে। ফলন হয়েছে ২৮ হাজার ৫শ’ ৮৫ মেট্টিক টন। এবার রাউজানে ১৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজি আবাদ হবে। বর্তমানে ২৩৫ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে।