রমজানকে ঘিরে পণ্যের আমদানি বেড়েছে

রাজিব শর্মা »

রমজান মাসকে সামনে রেখে দেশে খেজুর, ডাল, চিনিসহ প্রায় সকল পণ্যের আমদানি বেড়েছে। এসব আমদানির মধ্যে আগের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে রোজাদারদের অন্যতম খাবার খেজুর। এছাড়া রমজানকে ঘিরে কোন ধরনের কৃত্রিম সংকট যেন না হয় এবং অনান্যবারের মতো দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য আমদানিতে শুল্কছাড়ের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরে সর্বশেষ ডিসেম্বর পর্যন্ত গত সাত মাসে খেজুর আমদানি করা হয়েছে অনান্য বছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি; যা প্রায় ১৮৬ মেট্রিক টন। একই সঙ্গে বেড়েছে ডাল, ছোলা, মসলা, ভোজ্যতেল, চিনি, গমসহ প্রায়সব প্রয়োজনীয় খাবার।
আমদানির সঙ্গে জড়িত খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, অন্যবারের তুলনায় এবার আমদানি সরবরাহ ভালো রয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকও আমদানিতে এলসি খোলার সুযোগ দিচ্ছে। তবে ডলার রেট যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে এবার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে না। শুকনো মসলা উপকরণ আমদানিতে দাম হেরফের হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও পচনশীল মসলা উপকরণের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এবার ব্যবসায়ীরা অনান্যবারের তুলনায় আগেই পণ্য আমদানি করছে। ব্যাংকও সুযোগ দিচ্ছে। সে অনুসারে প্রশাসনের বাজার তদারকি বাড়ালে অসাধু ব্যবসায়ীদের পুরোনো সিন্ডিকেটের তৎপরতা গজিয়ে উঠবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে আমাদানির করা হয়েছে ছয় লাখ ৩৮ হাজার ৯৭২ মেট্রিক টন।
এছাড়া চলতি বছরের শুরু থেকে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা আমদানি করার সুযোগ পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি রমজানের আগেই দেশি মসলা বাজারে আসবে; যার কারণে পচনশীল মসলার দাম বাড়বে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
চাক্তাইয়ের ফোরকান ট্রেডার্সের মালিক মো. ফোরকান বলেন, এ বছর আমদানি সরবরাহ ভালো থাকায় অনান্য বছরের মতো পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম বাড়তির কোন প্রভাব পড়বে না। রমজানের আগেই দেশি পেঁয়াজও বাজারে আসবে। ব্যবসায়ীরা এখন থেকে নানাদেশে আমদানিতে বুকিং রেখেছে। আর আমাদের ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের নেতৃত্বে বাজারকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হবে।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস ডাল আমদানি আগের বছরের তুলনায় প্রায় সাত মেট্রিক টন বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর এক লাখ ৮৯ হাজার ৩৭৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রকারের ডাল আমদনি করা হয়েছে। আর ২০২৩ সালে ছিল এক লাখ ৮২ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। এছাড়া ছোলা চলতি অর্থবছরের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি করা হয়েছে ২৬ হাজার ৩৬৭ মেট্রিক টন। তাছাড়া আগাম এলসি করা ডালও বাজারে আসা শুরু হয়েছে। শুল্কছাড়ের ডালও রমজানের একমাস আগেই বাজারে আসবে বলে জানান ডাল আমদানিকারকরা।
এছাড়া ২০২৪ সালে ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়েছে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৩৫ মেট্রিক টন, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৩৩৪ মেট্রিক টন। অর্থাৎ গত বছরের ব্যবধানে চলতি অর্থবছর ৬৪ হাজার ৭০১ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল বেশি আমদানি করা হয়।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে চিনি আমদানি আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চিনি আমদানি করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন। আগের বছরের একই সময়ে দেশে চিনি আমদানি করা হয়েছিলো ছয় লাখ ৯০ হাজার ৮৮২ মেট্রিক টন।
আর ডিসেম্বরে আমদানিকারকরা দেশে দুই হাজার ১৮৬ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করেছে। নভেম্বরে দেশে আনা হয়েছিল ৬৫৪ মেট্রিক টন। চলতি মাসে খেজুরের যথেষ্ট বুকিং করা হয়েছে যা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে অর্ধেক বাজারে চলে আসবে বলে জানান খেজুর আমদানিকারকরা।
স্টেশন রোডের ফলমন্ডি এলাকার খেজুর আমদানিকারক মো. আবু জাফর বলেন, ব্যবসায়ীরা খেজুর আমদানি করার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু ইতিপূর্বে যেসব এলসি করেছে তার শুল্ক দিতে হয়েছে; যার কারণে কিছু খেজুরের দাম খরচ সমন্বয় করে বিক্রি করবেন আমদানিকারকরা। আর যেসব পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে তাও খরচ ছাড় দিয়ে বিক্রি করা হবে। তবে চাহিদা অনুযায়ী এবার খেজুর আমদানি করতে পারছেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এস এম মো. মহিউদ্দিন বলেন, অনান্য বছরের মতো এবারও ব্যবসায়ীরা রোজাকে ঘিরে আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে। সরকারও চ্যালেঞ্জ করেছে এবার কোন অবস্থায় পণ্যের সংকট হবে না। সে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের আমদানি করার সুযোগ দিচ্ছে। অনেকেই আগাম মজুদ করছে। এবার দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
‘আমদানিতে ব্যাংকের ডলার রেট ও বুকিং খরচে গরমিল’ রয়েছে দাবি করে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আমদানিতে সকল ব্যাংক ডলার রেট একদামে নিচ্ছে না। ব্যাংকভেদে ভিন্ন ভিন্ন ডলার দর নিচ্ছে ব্যবসায়ীদের থেকে। এটি সংস্কারে আসা প্রয়োজন। নয়তো একেক ব্যবসায়ী একক রেটে পণ্য বিক্রি করবে। এতে প্রশাসনের তদারকিতে যেমন সমস্যা হবে; বাণিজ্যে ব্যবসায়ীদেরও সমস্যা হবে। নিত্যপণ্যের বাজারে সমতা আসবে না। আমরা চাই, সকল ব্যাংকের ডলার রেট সমান হোক এবং প্রতিদিনই নোটিশে তাদের দর জানিয়ে দেয়া হোক।