রপ্তানিতে নতুন দিগন্ত উম্মোচন করলো বাংলাদেশের জিপিএইচ ইস্পাত। গতকাল বিকেল ৪টায় ডিজিটাল প্লাটফর্মে চীনে বাংলাদেশ থেকে প্রথম বিলেট রপ্তানির শিপমেন্টের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তারা উপর্যুক্ত মন্তব্য করেন। এ সময় শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, ‘করোনাকালীন দুঃসময়ের মধ্যেও জিপিএইচ ইস্পাত বিলেট রপ্তানি করে দেশ ও জাতির জন্য সম্ভাবনা ও সুসংবাদ বয়ে এনেছে। তারা ইস্পাতজগতে বিশাল কর্মযজ্ঞ সৃষ্টি করেছে। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিবৃদ্ধির জন্য তিনি বিভিন্ন দূতাবাসসমূহকে সক্রিয় করার আহবান জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জিপিএইচ ইস্পাতের বিলেট রপ্তানির তথ্যটি পৌঁছে দেয়া হবে। রপ্তানি বাস্কেটে জিপিএইচ ইস্পাত নতুন আইটেম সংযুক্ত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেকে একজন রপ্তানিকারক উল্লেখ করে বলেন, পোশাকশিল্পের ন্যায় উৎপাদিত ইস্পাতসামগ্রী রপ্তানিপূর্বক জিপিএইচ ইস্পাত বৈদেশিক মূদ্রা আয়, বিদ্যুৎ ও গ্যাসসাশ্রয়ী পরিবেশ বান্ধব সবুজ কারখানা সৃজন করেছে। এই প্রেক্ষাপটে জিপিএইচ ইস্পাতকে এমএস বিলেট ও এমএস প্রোডাক্ট রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা দেয়ার আবেদনের বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ বিবেচনায় রয়েছে। অনুষ্ঠানের এই পর্যায়ে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানের শুভসূচনা করেন। তখন প্লান্ট থেকে বেলুন উড়ানো হয়।
চট্টগ্রাম চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহাবুবল আলম বলেন, জিপিএইচ ইস্পাত চেম্বারের প্রবীণ সদস্য ও উদীয়মান শিল্প প্রতিষ্ঠান। তারা নন ট্রেডিশনাল আইটেম বিলেট রপ্তানি করছে। বিলেট রপ্তানি করে বেসরকারিখাতের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মান বয়ে এনেছে। তাদের আগামীতে চট্টগ্রাম চেম্বার অধিকতর সহায়তা প্রদান করবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখতে গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, আজ শুধু জিপিএইচ ইস্পাতের নয়, চট্টগ্রাম বন্দরেরও গর্বের দিন। এতে করে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অনুপ্রাণিত হবে। নিজের পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, জিপিএইচ ইস্পাত তাদের অসাধারণ দক্ষতা ও সক্ষমতা দিয়ে ‘স্টেট অব আর্ট’ প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করছে। ট্রেড ও ট্র্যারিফ কমিশন চেয়ারম্যান মুনসি শাহাবুদ্দিন আহামেদ বলেন, মুজিব শতবর্ষ ও শেখ হাসিনার মিশন ও ভিশন বাস্তবায়নে এটি একটি নতুন সংযোজন। তিনি জিপিএইচ প্লান্ট পরিদর্শনের অভিজ্ঞতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখতে গিয়ে জিপিএইচ গ্রুপ চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রপ্তানির জন্য আন্তর্জাতিক মান অর্জন পূর্বক জিপিএইচ ইস্পাত অব্যবহৃত বিলেট রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। একই সাথে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৭০-১০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের সমপরিমান রপ্তানি উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে। সরকারি নীতিমালার সহায়তা পেলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে আমরা সক্ষম হবো। আমরা আশা করবো, বাংলাদেশের অন্যান্য ইস্পাত উৎপাদক প্রতিষ্ঠানসমূহও একই সাথে রপ্তানিতে এগিয়ে আসবে।
সমাপনী বক্তব্যে জিপিএইচ ইস্পাতের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, আমাদের এই গুণগতমান ধরে রেখে বিশ্বব্যাপী ব্রান্ডিং করতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সহায়তা কামনা করেন। তিনি অতীতের দীর্ঘ শ্রমে-ঘামে গড়ে ওঠা এই প্লান্টের জন্য শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্য দিতে গিয়ে জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১-এর মিশন ও ভিশন ২০২০ এসে জিপিএইচ ইস্পাত বাস্তবায়ন করেছে। তিনি শিল্পমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, ট্রেড ও ট্যারিফ কমিশন চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম চেম্বার প্রেসিডেন্ট, চবক চেয়ারম্যানসহ সকল স্টেক হোল্ডারদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুষ্ঠানে জিপিএইচ ইস্পাতের ডাইরেক্টাবৃন্দ যথাক্রমে এম এ রউফ, মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান, আব্দুল আহাদ, আজিজুল হক রাজু, স্বতত্র পরিচালক মোকতার আহামদ উপস্থিত ছিলেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নির্বাহী পরিচালক (এফএন্ডবিডি) কামরুল ইসলাম এফসিএ।
এ বিলেট রপ্তানি উপলক্ষে জিপিএইচ ইস্পাতের প্লান্ট এলাকা সজ্জিতকরণ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি