শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেন, যৌতুক সমাজের জন্য অভিশাপ। যৌতুক দেয়া-নেয়া এবং মাদককে সবাই ঘৃণা করে। তবুও যৌতুক ও মাদকের আভিশাপ থেকে নিষ্কৃতি মিলছে না।
যৌতুক প্রথা, মাদকতার প্রভাব দেশ ও সমাজ থেকে নির্মূলে সরকারের নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি আলেমসহ সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি গতকাল জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে ১৩তম যৌতুক ও মাদকবিরোধী মহাসমাবেশ ও গুণীজন সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন যারা বিত্তবান ও সচ্ছল তারা বিয়ে শাদিতে অঢেল টাকা খরচ করে কন্যাকে পাত্রস্থ করেন। মূলত এ কারণেই যৌতুক প্রথা সমাজে জিইয়ে রয়েছে। ধনীরা বিয়ের নামে অঢেল অপচয় ও বিলাসিতা না থামালে যৌতুকের গ্লানি থেকে সহসা মুক্তি মিলবে না।
চট্টগ্রাম থেকে ব্যতিক্রমী যৌতুক ও মাদকবিরোধী সমাজিক আন্দোলনের সূচনার জন্য আল্লামা নূরীকে প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি।
রজভীয়া নূরীয়া কমিটি বাংলাদেশ এর উদ্যোগে বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন পীরে তরিক্বত আল্লামা আবুল কাশেম নূরীর আহ্বানে এ মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন রজভীয়া নূরীয়া কমিটি বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কাউছার হামিদ।
মহাসমাবেশে উদ্বোধক মাইজভান্ডার দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন পীরে তরিক্বত শাহ্সূফি সৈয়্যদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী বলেন, যৌতুক ও মাদক সামাজিক ব্যাধি। নিজের অজান্তেই তা আমরা লালন ও পরিচর্যা করছি। আমরা সচেতন নই। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে অচিরেই যৌতুক, মাদকসহ সামাজিক অবক্ষয় প্রবণতার রাশ টানা সম্ভব হতে পারে।
মহাসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ জাহিদুল হাসান রুবায়েত এবং সদস্যসচিব মুহাম্মদ মাছুমুর রশিদ কাদেরীর যৌথ সঞ্চালনায় মুখ্য আলোচক ছিলেন আন্জুমানে রজভীয়া নূরীয়া ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট আল্লামা মুহাম্মদ আবুল কাশেম নূরী। তিনি বলেন, দেশ ও সমাজে যৌতুক ও মাদকের মতো জঘন্য ব্যাধি ভয়ংকর রূপ নেবে, আর আমরা আলেম সমাজ তা চেয়ে চেয়ে দেখবো তা কখনো হতে পারে না। যৌতুক-মাদকসহ সকল প্রকার সামাজিক ব্যাধি থেকে নিষ্কৃতির জন্য আলেম, ইমাম ও পীর মাশায়েখকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি যৌতুক, মাদক, নারী ও শিশু নিপীড়ন থামাতে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম কলেজ রসায়ন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান নু.ক.ম আকবর হোসেন ও ড. মাসুম চৌধুরী। মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল, আল্লামা মাসউদ হোসাইন আলকাদেরী, পীরে তরিক্বত মহিউদ্দিন লতিফী, এম এ মতিন, কাযী মুহাম্মদ আবুল ফোরকান হাশেমী ও সাদেকুর রহমান খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মোহাম্মদ মিঞা জুনাইদ।
নু.ক.ম আকবর হোসেন বলেন, একটি মুসলিম প্রধান দেশে যৌতুকের নামে সামাজিক অরাজকতা আর চলতে দেওয়া যায় না। আলেম, ইমাম ও সমাজের নেতারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখলে যৌতুক, মাদক, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে মুক্তি মিলতে পারে। অধ্যাপক মাসুম চৌধুরী বলেন, সামাজিক সচেতনতা ছাড়া যৌতুক ও মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা বেশ কঠিন। ধনীরা প্রাচুর্যের বাহাদুরি না থামালে বিয়ের নামে গরিব পরিবারের মাতম ও হাহাকার কখনো থামানো যাবে না। আল্লামা নূরীর যৌতুক, নারী নিপীড়ন ও মাদকবিরোধী এ আন্দোলন সারা দেশে প্রসারিত করতে হবে। যৌতুকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় আলেম ও ইমামদের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
এতে সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাজী মুহাম্মদ ফোরকান রেজা, আবু ছালেহ আঙ্গুর, মাহমুদুল হক রাজিব, মুহাম্মদ হাসান আলী, মুহাম্মদ আবুল হাসান, মাওলানা কুতুবউদ্দিন শাহ্ নূরী, মুহাম্মদ ওমর ফারুক, মাওলানা আব্দুল কাদের রজভী, শায়ের এনামুল হক এনাম ও মুহাম্মদ জাকারিয়া।
অনুষ্ঠানে করোনাকালীন রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে মানবিক কাজে অবদান রাখায় সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী এবং করোনা প্রতিরোধক বুথ উদ্বোধক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর।
এতে সহস্রাধিক তরুণ যুবক যৌতুক ও মাদককে সমস্বরে ‘না’ বলেন।
মহাসমাবেশ শেষে পীরে তরিক্বত আল্লামা আবুল কাশেম নূরীর নেতৃত্বে যৌতুক ও মাদকবিরোধী বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বিজ্ঞপ্তি