মো. মহসিন »
স্বাধীনতা অর্জনের সময়কাল থেকে দেশ দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ সঠিক ট্র্যাকেই এগুচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন স্বাধীনতাত্তোর সময়ে প্রায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ভবিষ্যৎ স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের কতক নির্দেশনা ও আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তোলার যে তাগিদ দিয়েছিলেন, তার ফলশ্রুতিতে আজকের সফল ও উন্নয়নমুখী বাংলাদেশ। বিশেষ করে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব সাফল্যে বাংলাদেশের উন্নয়নধারা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিগত সময়ের একপর্যায়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর কিছু সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে পড়ে।
বিগত বছরের শুরু থেকে মহামারির দাপটে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের অর্থনৈতিক স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এই মহামারি প্রতিকুলতার কারণে আগামীতে হয়তো বিশ্ববাণিজ্যে ব্যাপক ধস নেমে আসতে পারে। আজকের বাংলাদেশ শত বৈশ্বিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন কার্যক্রম তেমন বাধাগ্রস্ত হয়নি। এমনকি করোনার প্রাথমিক পরিস্থিতিতে দেশে কিছু স্থবিরতা সৃষ্টি হলেও, তা সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে নিয়ন্ত্রণে আসে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের নিজস্ব বিনিয়োগে জনগণের বহু আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়ন হয়েছে, যা দেশের আরো অন্যান্য যোগাযোগ বৃহৎ প্রকল্পগুলোর বাস্তব উন্নয়নের গতিধারাকে বেগবান করেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলায় এশিয়ার প্রথম কর্ণফুলী নদীর নীচে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। টানেলের প্রায় অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে এটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের ফলে কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় ৪০কিলোমিটার কমে আসবে। কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের পরিবহনগুলো তখন চট্টগ্রাম শহরকে এড়িয়ে কর্ণফুলী টানেল দিয়েই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অনায়াসে চলাচল করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই টানেলে গাড়ি চলাচল শুরু হলে চট্টগ্রাম শহরের যানজটও অনেকাংশে কমে যাবে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট ছোট ব্রিজ, কালভার্ট ও সেতু নির্মিত হওয়ার ফলে ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণে জনগণের ভোগান্তি লাঘব হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে বহু বছর বিভিন্ন জটিলতার আবর্তে পড়ে দীর্ঘসূত্রতার কারণে রেললাইন স্থাপনের কাজে বেশ বিলম্ব হয়েছে। মোট ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়িত হলে মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। এছাড়া ২৭টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে পড়বে। ফলে, দেশের পর্যটন খাতে বড় ধরনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে যথাযথভাবে শুরু হয়েছে। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে রেলে কক্সবাজার যাওয়া যাবে। এর ফলে পুরো দেশের রেললাইন কক্সবাজারে রেললাইনে যুক্ত হবে। ফলে দেশের আপামর জণগণ যাতায়াত ব্যবস্থায় সুযোগ সুবিধার অধিকারী হবেন এবং সারাদেশে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের রেল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে সরকারের হাতে নেওয়া প্রকল্পগুলি শেষ হলে। এতে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতি আরো সচল হবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক