যে স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছি সেটা বাস্তবায়নে কষ্ট পেতে হবে না’

বিশেষ সাক্ষাতকার- সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন

ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। মহানগরীর নানা বিষয় ও ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন সুপ্রভাতের সঙ্গে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন সুপ্রভাতের প্রধান প্রতিবেদক নিজাম সিদ্দিকী।

সুপ্রভাত : ইতিমধ্যেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক আপনার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দেশ সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এ প্রাপ্তিতে আপনার প্রতিক্রিয়া
মেয়র : আমি তো বলেছি যে, এই স্বীকৃতি এটা শুধু আমার একার নয়। এটা সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর। আমি মনে করি, চট্টগ্রামবাসীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে আমি এই স্বীকৃতি পেয়েছি। তো এটা যাতে আমি ধরে রাখতে পারি সেজন্য আমি চট্টগ্রামবাসীর কাছ থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা চাইবো, যাতে আমি যে কথাটি বারবার বলছি যে এই শহরটাকে একটা ক্লিন, গ্রিন, হেলদি এবং সেফ সিটি রাখার জন্য জনগণের অনেক দায়িত্ব আছে। এবং আমি মনে করি যে, আমাদের চট্টগ্রামের যে জনগণ তারা অনেক সেনসিটিভ। তারা আমার এই কাজগুলো করছে। তারা ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলছে। এবং এ ধরনের চর্চা তাদের যদি থাকে আশা করি আমার যে স্বপ্ন নিয়ে আমি এগোচ্ছি সেটা বাস্তবায়নে এমন একটা কষ্ট পেতে হবে না।

সুপ্রভাত : সম্প্রতি নগরে যে জলাবদ্ধতা হয়েছে সেটা আপনি দেখেছেন, সরেজমিনে এলাকাগুলো পরিদর্শন করে পরিস্থিতি ওয়াকিবহাল হয়েছেন। এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শেষ পর্যন্ত এর কি সমাধান হলো ?
মেয়র : দেখুন, আমি যখন শপথ নিয়ে আসি, আমার প্রথম যে চিন্তাভাবনা ছিল চট্টগ্রামবাসী যে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেত গত বিশ বছর ধরে, সেটা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে আমি যেহেতু বাকলিয়া এলাকায় থাকি, আমি দেখেছি মানুষজন আসলে কি কষ্ট পাচ্ছিলো। অলিতে গলিতে মানুষ হাঁটতে পারছিল না। তাদের সমস্ত আসবাবপত্র থেকে শুরু করে, খাবার দাবার পর্যন্ত কমপ্লিটলি পানির মধ্যে থাকতে হতো এবং জনজীবন খুব বিপর্যস্ত ছিল। কাজেই সেই দিক দিয়ে চিন্তা করে যখন আমি দায়িত্ব নিলাম, আমার প্রথম কাজ ছিল জলাবদ্ধতা কীভাবে নিরসন করা যায়। সে প্রেক্ষিতে আমি চট্টগ্রামের যে খালগুলো আছে সে খালগুলো আমি চিহ্নিত করে, বিশেষ করে সার্ভিস ওরিয়েন্টেড যে অরগানাইজেশনগুলো যেটার মধ্যে সমন্বয় ছিল না আমি তাদেরকে প্রথমে সমন্বয়ের জায়গায় নিয়ে এসেছিলাম। সমস্ত অরগানাইজেশনগুলোকে নিয়ে প্রথমে প্রতি সপ্তাহে একবার করে মিটিং করে পরবর্তীতে মাসে একবার মিটিং করেছি। এভাবে করে সিডির যে কাজগুলো আছে সেগুলো সিডিএ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে স্লুইস গেইট নির্মাণ তারা তা করেছে, ওয়াসার কাজ ওয়াসা করেছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাজ তারা করেছে। বিশেষ করে মূল কাজটি করেছে বন্দর, তারা ড্রেজিং প্রকল্প করেছে এবং খালের মুখগুলো ক্লিন করেছে। তো ওভারঅল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে যে কাজটা আমরা করেছি সেটা হচ্ছে ষোলশ’ কিলোমিটার যে ড্রেইন আছে সে ড্রেইনগুলো আমরা কিন্তু কন্টিনিউয়াস প্রসেসে ক্লিন রেখেছি। এবং আমরা আরেকটা বড় কাজ করেছি আগ্রাবাদে। সেখানে আমরা ২.৯ কিলোমিটার একটা বক্স কালভার্ট নৌবাহিনীকে দিয়ে ক্লিন করেছি। এটা অলরেডি শেষ। এখন আমরা তাদেরকে রিকুয়েস্ট করেছি টিল অ্যান্ড অব দ্য রেইনি সিজন তারা যাতে কাজগুলো করে। আরেকটা হচ্ছে, বহদ্দারহাটে আপনারা দেখেছেন এখানে একটা বিশাল মার্কেট যেটা মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময়ে করা হয়েছিল, যেটা নালার ওপর ছিল, সেটা আমরা সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছি। এটার কারণে একসময়ে বহদ্দারহাট, মুরাদপুরে পানি উঠতো, সেটা এখন অনেকটা কমে গিয়েছে। আমাদের একটা বারইপাড়া খাল আছে, সেটার প্রায় ৯০ পারসেন্ট কাজ সমাধা হয়ে গিয়েছে। আশা করি, নেক্সট ডিসেম্বেরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের ৫০ পারসেন্ট কাজ এখনো বাকি রয়ে গেছে। সেটার জন্যে আমরা আশা করছি যে, কেন্দ্রীয় সরকার থেকে আমরা যদি একটা ভালো সাপোর্ট পাই, ৫৭টি খালের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আমাদের যে ২১টি খাল সংষ্কার করার কথা সেটার কাজ যদি আমরা করতে পারি, পাশাপাশি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ৩৬টি খালের মধ্যে তারা ২১টি খাল করেছে, আরো ১৫টি খাল বাকি আছে, এ খালগুলো যদি তারা করে দিতে পারে, আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে স্লুইস গেইট বা জলফটক নির্মাণ সেগুলো যদি তারা করে দিতে পারে তাহলে আশা করি জোয়ারের পানির চাপটা নিরসন হবে। এবার দেখেছেন, দু’বার জলাবদ্ধতা হয়েছে একটা মে-তে এবং আরেকবার হয়েছে জুলাইতে। মে-তে সর্বোচ্চ ২০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে কিন্তু কোনো জায়গায় পানি থেমে থাকে নি। এবার জূলাইয়ের শেষ দিকে যে জলাবদ্ধতা হয়েছে সেটা ইনফেক্ট হয়েছে জোয়ারের বেগ খুব বেশি ছিল বলে, টাইডাল ভলিয়ম বেশি থাকার কারণে এবার একটু বেশি হয়েছে। এজন্যে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সিডিএ-কে বলেছি যে, স্লুইস গেইটগুলো যদি করে ফেলতে পারতো তাহলে কিন্তু এটার সমাধান হতো।
এবার আমি সরেজমিনে ঘুরে যেটা দেখেছি, হালদার পানির যে টাইডাল ভলিয়ম সেটা বেশি ছিল, সেটার কারণে মোহরার কিছু অংশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, আর হাজিপাড়া ৩ নম্বর ওয়ার্ড এটা একটা বদ্ধ অংশ সেখানে জলাবদ্ধতা হয়েছে। আর বাকিগুলোর ক্ষেত্রে বলবো- যখন বৃষ্টি পড়তে থাকে তাৎক্ষণিকভাবে কিন্তু সময় লাগে বৃষ্টি থামার পরে। কাজেই ওটাকে আমরা জলাবদ্ধতা বলতে পারি না, ওটাকে আমরা ‘জলজট’ বলতে পারি। জলাবদ্ধতার ডেফিনেশন হচ্ছে, বৃষ্টির থামার পর ৬ ঘণ্টার মধ্যে যদি ৬ ইঞ্চি পানি থেকে যায় তাহলে সেটাকে বলা হবে জলাবদ্ধতা। কিন্তু চট্টগ্রাম শহরে এবার দেখেছি, এক থেকে দেড় ঘণ্টা মেক্সিমাম দুই ঘণ্টার মধ্যে সব পাানি সরে গেছে। হ্যাঁ, এখানে একটা কথা আছে, বৃষ্টি যদি পড়তে থাকে এতে পানির পরিমাণ যে বাড়তে থাকে সেটাকে আপনি কিভাবে রিডিউস করবেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেটার কারণে আমরা বলতে পারি আমাদের শহরে যে জলাধার, জলাশয় পুকুরগুলো ছিল সেগুলো কিন্তু একেবারে কমে গেছে। তো আমি যে এবার চিন্তা করেছি সেটা হচ্ছে, আমার যে নালাগুলো আছে নালাগুলোর ক্লিনিং প্রসেস, এগুলো থাকবে সবসময়। আরেকটা হচ্ছে রিজার্ভার। আমাদের যে কন্টেইনার যেগুলো আছে পানিগুলোকে ধরে রাখার জন্য। আমরা যদি সিডিএ-র সাথে একসাথে কাজ করে, বিল্ডিং কোডে যদি আমরা প্রতিটা বিল্ডিংয়ের মধ্যে একটা কন্টেইনার করে দিতে পারি সো দেট বৃষ্টির পানিগুলো ওই কন্টেইনারের মধ্যে থাকবে। এটা রিজার্ভারের মত। সেটা যদি আমরা করতে পারি যেটাকে আমরা বলছি রেইন ওয়াটার হার্বেস্ট রিসাইক্লিং ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। এটা শুধুমাত্র জমা থাকবে না। সেটা রিসাইক্লিং এর মাধ্যমে ওয়াসা সেটা হয়তো ইউজ করতে পারবে। এক্ষেত্রে একটা রাজস্ব আসার সম্ভাবনা আছে। তো এই ধরণের কিছু চিন্তাভাবনা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এটা হলে, যুগান্তকারী একটা পদক্ষেপ হবে। আর নালাগুলোতে আমরা একটা চিন্তা করছি যে ষোলশো কিলোমিটার ড্রেনে একটা সেন্সর প্রসেস বসানো। সেন্সর প্রসেসে নালাগুলোর মধ্যে একটা ছাকুনির মধ্যে থাকবে এতে ময়লাগুলো আটকে যাবে। এটা আমরা আবার ক্লিন করতে পারব। পলিথিন, প্লাস্টিক, কগশিটগুলো সরাসরি নালাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। অনেক সময় পাহাড় থেকে বালিগুলো আসতে থাকে। যেগুলোর কারণে গিয়ে সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা হয়। তো সব মিলিয়ে আমাদের কিছু রিচার্জ কাজ আছে। আমরা আশা করছি যেগুলো আমরা ফুলফিল করতে পারি। সো জলাবদ্ধতা নিয়ে একটা পারফেক্ট সমাধান আমরা দিতে পারব। বাট ইট উইল টেক টাইম। আমরা যদি মনে করি, যে আজকে আমি শেষ করে দেবো এটা নয়। এটার জন্য আমাদের আরও কিছু প্ল্যান আছে। আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার জনসংম্পৃক্ততা। জনগণকে যদি আমরা সচেতন করতে পারি, এর মাধ্যমে যদি পলিথিন, প্লাস্টিক, ককশিট যেগুলো অপচনশীল, যেগুলো নন পেরিশেবল যার কারণে গিয়ে জলাবদ্ধতা হচ্ছে এগুলো ফেলার প্রবণতা বন্ধ করতে পারি তাহলে সেটা হবে একটা গুড সাইন। আমাদের পার্মানেন্ট একটা প্রসেসের জন্যে। আরেকটা হচ্ছে, যেটা আমরা এখন করতে চাচ্ছি ওয়াস্ট টু এনার্জি। এই যে ময়লাগুলো সম্পদ পরিণত করা। তাহলে কেউ ময়লা আর ফেলবে না। আমরা প্লাস্টিক পলিথিন সব মিলিয়ে যদি একটা ইলেকট্রিসিটি তৈরি করতে পারি এবং সেটার জন্য জাপানের সাথে আমাদের কথা হয়েছে, কোরিয়ার সাথে, সিঙ্গাপুরের সাথে কথা হয়েছে, রিসেন্টলি আমি টরেন্টোতে গিয়েছিলাম তাদের সাথে আমার কথা হয়েছে, ইউকের সাথে কথা হয়েছে। তাদের সাথে কথা চলছে। অলরেডি জাপানের একটা গ্রুপ, তারা আসছে এটার জন্য। তো তাদের সাথে যদি আমাদের সাইনিং হয়ে যায় তাহলে এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে জলাবদ্ধতার জন্য। এবং ফাইনালি যেটা আমি করেছি যে স্কুল থেকে, স্কুল বাচ্চাদেরকে এখন থেকে যদি সচেতন করতে পারি যে ময়লাটা যাতে তারা যেখানে সেখানে না ফেলে সেটা একটা ডাস্টবিনে ফেলে। আমাদের সিটি কর্পোরেশনে প্রায় ১০০টা ইনস্টিটিউশন আছে। সেখানে আমরা স্কুল হেলথ কার্ড দিচ্ছি। সেটাতে যে শুধুমাত্র বাচ্চাদের বডি চেকআপ থাকবে কিংবা তাদের মিড-ডে মিল থাকবে তা নয়, এগুলির বাইরেও যেটা থাকবে সেটা হচ্ছে কীভাবে তারা ময়লাগুলোকে ক্লিন করবে, ময়লা কোথায় ফেলবে, কোথায় ফেলা উচিত-এ ধরনের কিছু চিন্তাভাবনা বাচ্চাদেরকে আমরা শিখাবো। হয়তোবা দশ বছর পরে গিয়ে সেই বাচ্চাটাই সমাজকে পরিবর্তন করতে পারবে।

সুপ্রভাত : এ নগরের সড়ক দ্বীপ (আইল্যান্ড) গুলোর সবখানে একই ধরনের সবুজ গাছগাছালি থাকবে অথবা সারা বছর ফুলে ফুলে ভরে থাকবে এগুলো- নগরবাসী হিসেবে এমন একটা স্বপ্ন আমরা দেখি। যাতে রাস্তায় বেরুলে সকলের মন ভালো হয়ে যাবে। আপনি কি সেই স্বপ্ন পূরণে আশা জাগানোর মতো কোনো উদ্যোগের কথা জানাবেন?
মেয়র : আপনারা জানেন যে, আমরা এর মধ্যেই সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কিছু অ্যাডভার্টাইসমেন্ট দিয়েছি এবং সেটা টেন্ডার বেসিসে, অনেকে বিড করেছে। সেখান থেকে কম্পিটেটিভ যারা আছে, বিশেষ করে যাদের ক্রিয়েটিভ আইডিয়া আছে, তারা তাদের ইনোভেটিভ আইডিয়া নিয়ে আমাদেরকে দিয়েছে ডিজাইনগুলো, তাদেরকে আমরা এ কাজগুলো দিচ্ছি। এখন প্রায় চোদ্দটা ওয়ার্ড আমরা দিয়েছি। বাকি ওয়ার্ডগুলোর প্রজেক্ট আমরা দিচ্ছি। তো এই কাজগুলো যদি হয়ে যায় এবং আমাদের একটা প্ল্যানও আছে এবার -ওয়ান মিলিয়ন ট্রিজ প্লান্টেশন। আমরা যদি দশ লক্ষ গাছ লাগাই, এটা যদি আমরা সাকসেস হতে পারি তাহলে আমরা যে গ্রিণ সিটি, সবুজ শহরের কথা বলছি সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো আশা করছি।

সুপ্রভাত : সবুজ পাহাড় ঘেরা এ নগরের পাহাড়গুলো কোথাও কোথাও গাছ গাছালি বিহীন নিরাভরণ হয়ে যাচ্ছে, আবার কোথাও এর সৌন্দর্য ম্লান করে দিচ্ছে অপরিকল্পিত পাহাড় কাটার প্রবণতা। এ নিয়ে কী ভাবছেন।
মেয়র : পাহাড়ের ব্যাপারে আমি যেটা বলতে চাই, আমরা কমপ্লিটলি বলেছি যারাই পাহাড় ধ্বংস করছে, পাহাড় কাটছে তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। আগে যে একটা কালচার ছিল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও কিন্তু এতে জড়িত ছিলেন। কিন্তু এই নয়-দশ মাসে আমরা দেখেছি যে, এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নাই। এ ধরনের কর্মকান্ড কেউ করছে না। এ ব্যাপারে গণসচেতনতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরেও অনেক ভূমিদস্যু আছে তাদের ব্যাপারে প্রশাসনও সচেতন আছে, আমরা সচেতন আছি, পরিবেশ অধিদপ্তরও সচেতন আছে। এরপরেও এ ধরনের কাজ যেই করুক তার বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশনে যাবো।

সুপ্রভাত : সম্প্রতি কাজির দেউড়ি শিশু পার্কটি অধিগ্রহণ এবং আগ্রাবাদ শিশু পার্কের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে নগরে শিশুদের বিনোদনকেন্দ্রের একটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে, এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের কোনো উদ্যোগ রয়েছে কি-না
মেয়র : দেখুন আরেকটি চিন্তা করে আমি এ কাজ করছি যে ৪১টি ওয়ার্ডে ৪১টি খেলার মাঠ। এটা ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট একটা ইস্যু। কারণ আমাদের যে কিশোর গ্যাং তৈরি হয়েছে, এটার মূল কারণ হচ্ছে আমরা তাদের বিনোদনের জন্য কোনো ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে পারি নাই। বিশেষ করে খেলার মাঠ। তারা আজকে খেলার মাঠ না পেয়ে ছোট ছোট মোবাইলের মধ্যে তারা আবদ্ধ হয়ে গেছে। সেখান থেকে তারা বিভিন্ন ক্রাইম শিখছে। ক্রাইম শিখে তারা এ কাজগুলো করছে। তো ওই জায়গায় গিয়ে আমরা যদি ৪১টি ওয়ার্ডে ৪১টি খেলার মাঠ করে দিতে পারি তাহলে সেখানেও একটা বিনোদনের ক্ষেত্র তৈরি হবে। এর মধ্যে আমরা ৯নং ওয়ার্ড ফিরোজ শাহ মাঠের সৌন্দর্যবর্ধন এবং সেখানে ওয়াকওয়েসহ ওইটা করে দিচ্ছি। ১১নং ওয়ার্ড একটা বহুরূপী মাঠ ছিল সেটার আমরা কাজ ধরেছি এবং সেটা প্রায় শেষের দিকে। আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠের ব্যাপারে ইউসিবিএলের সঙ্গে আমাদের একটা সাইনিং হয়েছে, তাদেরকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি কাজটা করার জন্যে। সেটাও খুব দৃষ্টিনন্দন মাঠ হবে, সবার জন্যে উন্মুক্ত থাকবে। হালিশহর বিডিআর মাঠও সুন্দর করে দিচ্ছি ওয়াকওয়েসহ। হালিশহর এইচ ব্লকে পার্কসহ একটা মাঠ করে দিচ্ছি, আমি উদ্বোধন করবো। হালিশহর ই ব্লকেও পার্কসহ মাঠ করেছি। আবার আমাদের বাকলিয়াতে যে মাঠটি আপনারা দেখেছেন সেটাকে একটা বিশাল আন্তর্জাতিক মাঠ হিসেবে তৈরির চিন্তাভাবনা আছে। সেটার কার্যক্রম এখন চলছে। একটা বালির মাঠ আছে সদরঘাটে, সেখানে আমরা কিছু কার্যক্রম করছি। এর বাইরে গিয়ে পার্কের কথা বলছেন। আমাদের তো পতঙ্গা আছেই। আপনারা জানেন যে, সেখানে কিছু কাজ আমরা করেছি। আমাদের শিশু পার্কটা আছে আগ্রাবাদ। সেটাও আমরা উদ্বোধন করবো-উইদিন শর্ট টাইম। তারপরে ওয়াসিম আকরাম পার্ক, আমবাগানে। সেটারও কার্যক্রম চলছে। রেলওয়ের সাথে আমাদের একটা চুক্তি হয়েছে। আমাদের বিপ্লব উদ্যানে একটা দৃষ্টিনন্দন পার্ক হবে এবং সেখানে একটা কথা আছে যে, অনেকেই সেটাকে বলতে চাচ্ছে যে পার্ক না করে কোনো ধরনের রাজনৈতিক একটা প্লেস লালদীঘির ময়দানের মতো, যেটার ঐতিহাসিক- একটা পটভূমি যেহেতু আছে সেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেখানে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তো ওভারঅল সব মিলিয়ে আমাদের গ্রিন পার্ক করার বিষয়টি মাথার মধ্যে এখনো আছে। সেভাবে কাজ চলছে। পার্কের কাজ হচ্ছে। আরেকটা জিনিস আমরা করতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে ওযান সিটি টু টাউন। যেটা নিয়ে আমি এখন কাজ করছি। কর্ণফুলী নদীর ওই পাড়ে একটা জাযগা আমরা পেয়েছি যেটাতে একটা সোলার এনার্জিসহ একটা পর্যটন সিটি করার চিন্তাভাবনা আছে। এবং মেরিন ড্রাইভে আমরা সিডিএ-র সাথে জয়েন্টলি কাজ করার জন্য সচেষ্ট আছি। ওভারঅল এই শহরটাকে আস্তে আস্তে একটা বাসযোগ্য শহরে পরিণত করার আমার চিন্তাভাবনা আছে। নগরের ইস্পাহানি বিল্ডিং এর সাথে লাগানো জমিয়তুল ফালাহ কমপ্লেক্সের জায়গাটিতে ওয়াকওয়েসহ একটা মিনি পার্ক করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। এখানে পার্ক করে দিতে পারলে বিকালে সময় কাটানো যাবে। ইভেন নগরের ঢেবার পাড়, আশকার দীঘির পাড়ে যাতে একটা ওয়াকওয়ে করে দেওয়া যায় সেই কাজগুলো আমরা করছি। এসব কিছু করতে একটু সময় হয়তোবা লাগবে। কিন্তু ইনশাঅল্লাহ আমি আশা করছি যে, আমি যে চিন্তাভাবনা নিয়ে এগোচ্ছি যদি সাধারণ মানুষ, জনগণ আমার সাথে থাকে আশা করি এই কাজগুলো আমি করে দিতে পারব।

সুপ্রভাত: এবারে জানতে চাইবো, নগরের গণপরিবহন, মেট্রো বা মনোরেল প্রকল্প, র‌্যাপিড ট্রানজিট বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের পরিকল্পনার কথা।
মেয়র: হ্যাঁ মনোরেলের ব্যাপারে অলরেডি আরব কন্ট্রাক্টারস ইজিপশিয়ান একটা কোম্পানি তারা আমাদের সাথে সাইনিং করেছে। তারা অলরেডি এসেছে সাইনিং হয়েছে এবং বিডার চেয়ারম্যান মি. আশিক, হি ইজ অলসো ইন্টারেস্টেড। উনি সহ একসাথে ইনভলভ হয়ে মনোরেলের যে ২৫ হাজার কোটি টাকার একটা প্রজেক্ট সেটা তারা করার জন্য সচেষ্ট ও আমরা আশা করছি এটা যদি হয়ে যায় এটা আমাদের কানেক্টিভিটির জন্য একটা যুগান্তকারী কাজ হবে।
র‌্যাপিড ট্রান্সপোর্ট এজ ওয়েল এজ মহিলাবান্ধব ট্রান্সপোর্টেশনের ব্যাপারে আমাদের চিন্তাভাবনা আছে। শুধুমাত্র মেয়েদের চলাচলের জন্য বাসের ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে একটা কোম্পানির সাথে কথা চলছে। তারা যদি রাজি হয় সেই কাজটাও আমরা করে ফেলবো ইনশাল্লাহ।

সুপ্রভাত: এছাড়া আপনার আর কী কী পরিকল্পনা রয়েছে?
মেয়র: আমরা হেলদি সিটির কথা চিন্তা করছি, হেলদি অ্যান্ড সেফ সিটি। হেলদি সিটিতে আমি যেটা চিন্তা করছি, আমার যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আছে সেখানে ম্যাটারনাল চাইল্ড ফ্যাসিলিটিজ এনশিউর করা। সেটা অনেকাংশে কমে গেছে। আমি এইটা বাড়ানোর জন্য চিন্তা করছি। বিশেষ করে আমার যে মেমন হসপিটাল টু আছে সেটার ব্যাপারে আমি ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি কয়েকজন বিজনেসম্যানের সাথে কথা বলেছি। যাতে জিরো ক্যাশ কাউন্টার হসপিটাল হবে। মানে একটা রোগী ঢুকবে সে কোনো টাকা দেবে না। কিন্তু সেবাগুলো সে পাবে। এই ধরনের একটা চিন্তা নিয়ে আমি এগোচ্ছি। যদি সেটা আমি ক্লিক করতে পারি, তাহলে আশা করি এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে।
আর একটা হচ্ছে সেফ সিটি। নিরাপদ নগরী। আমি মনে করি যে এ শহরটা সমস্ত ধর্মের, সমস্ত বর্ণের, সমস্ত পেশার জন্য এবং সবার জন্য এ শহরটা যাতে নিরাপদ থাকে এটাই আমার মূল কথা। শুধু নিরাপদ রাস্তা নয়, নিরাপদ নগরী।
আমাদের চট্টগ্রাম শহরে দেখুন, এখন পর্যন্ত আলিফ মার্ডার ছাড়া আর কোনো হত্যা ওইভাবে হয় নি। এবং এটার জন্য কিন্তু আমরা সবাই ঐকান্তিকভাবে কাজ করছি। এটা আমার একার কারণে নয় শুধু। আমি মনে করি, আমরা যারা সমস্ত দলগুলো আছে, সমস্ত ধর্মের যারা আমরা আছি, আমরা যারা সমস্ত পেশাজীবীরা আছি, আমরা সমস্ত জাতির যারা আছি, আমরা সমস্ত শহরের যারা লোক আছে সবাই কিন্তু ঐক্যবদ্ধ আছি ; যাতে এখানে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ না হয়। যে কোনো ধরনের মানুষ যাতে কারো দ্বারা যেনো আক্রান্ত না হয়।

সুপ্রভাত: নগরবাসীর জন্যে আপনার কোনো ম্যাসেজ
মেয়র : নগরবাসীকে শুধু এইটুকুই বলতে চাই, আপনারা সবাই এ শহরকে ভালোবাসুন। এ শহর আপনাদের। এবং যখনি আপনি এ শহরের প্রতি মমত্ববোধ, ভালোবাসা দেখাতে পারবেন তখনি আমার জন্যে এ শহরটাকে ক্লিন, গ্রিন এবং হেলদি করাটা খুব সহজ হবে।