জেমস ম্যাথিউ বেরি
ভাষান্তর- ফারুক হোসেন সজীব
নাভারল্যান্ড নামে একটি ছোট্ট দ্বীপ ছিল। সেই দ্বীপটি ছিল এক রহস্যময় দ্বীপ। সেখানে সবাই যা খুশি তাই করতে পারত। সে দ্বীপে বাস করত পিটার নামে এক আশ্চর্য বালক! সে কখনোই বড় হতে চাইত না। সে সারাক্ষণ দুষ্টুমি, খেলা, গান গাওয়া এসব নিয়ে মেতে থাকত, কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে সে কখনো বড় হতে চাইত না!
ছোট্ট পিটারের কোনো স্কুল ছিল না। পড়াশোনা ছিল না। সে শুধু আনন্দ আর খেলা করতে পছন্দ করত। পিটার জানত, বড় হলে তাকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে। যা সে কখনো চাইত না। সে সব সময় চাইত তার জীবন আনন্দ আর মজা করে কাটুক।
একদিন পিটার আকাশে উড়ছিল। হঠাৎ তার চোখে পড়ল একটি ছোট্ট মেয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির চোখে ছিল এক অদ্ভুত কৌতূহল। পিটার মেয়েটির কাছে এসে বলল, তোমার নাম কি? মায়া! আমার নাম মায়া! পিটার শুনে বলল, ওয়াও দারুণ নাম! তুমি কি আমার সঙ্গে নাভারল্যান্ডে যেতে চাও? সেখানে কোনো স্কুল নেই। পড়াশোনা নেই। কেবল খেলা আর খেলা!
মায়া একটু অবাক হয়ে হয়ে বলল, কোনো স্কুল, পড়াশোনা নেই? পিটার বলল, না সেখানে এসব কিছুই নেই। সেখানে শুধু আনন্দ আর আনন্দ আছে! মায়া বলল, হ্যাঁ আমি যেতে চাই!
কিন্তু তুমি কে? তুমি তো একদম পিচ্চি আর ছোট্ট!
পিটার হেসে বলল, আমি পিটার! নাভারল্যান্ডের ছেলে। আমি কখনো বড় হতে চাই না! এজন্য আমি আজও ছোট।
মায়া বলল, ওয়াও! এটা তো দারুণ মজার ব্যাপার! ঠিক আছে আমাকে তোমার নাভারল্যান্ডে নিয়ে চলো। আমি সেখানে যেতে চাই।
তারপর পিটার মায়াকে তার জাদুর ডানায় বসিয়ে নাভারল্যান্ডে নিয়ে এলো। নাভারল্যান্ডে এসে মায়া খুব অবাক হলো। এখানে সব কিছু অনেক রঙিন এবং মজার। গাছগুলি খুব অদ্ভুত আর বড়। ফুলগুলি উজ্জ্বল রঙের। চারিদিকে বাতাসে যেন সঙ্গীতের মিষ্টি সুর বাজছে। মায়া ভীষণ আনন্দিত হয়ে বলল, নাভারল্যান্ড তো সত্যি অসাধারণ! এখানে আমি কী কী করতে পারব? পিটার বলল, এখানে তুমি যা চাও, তাই করতে পারো। আমরা খেলতে পারি। উড়তে পারি। দুষ্টুমিও করতে পারি। পিটার এবং মায়া প্রথমে গেল এক রঙিন রেনবো নদীতে। সেখানে গিয়ে তারা নৌকায় ভেসে বেড়াল। নদীর জল থেকে লাফিয়ে পড়ল। তারপর তারা হেসে হেসে চলে গেল একটি পাহাড়ের দিকে। পাহাড়ের ওপর ছিল অনেক বড় বড় গাছ এবং গাছগুলির নিচে লুকিয়ে ছিল মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা শত-শত প্রাণি! মায়া প্রাণিগুলোকে দেখে ভীষণ মজা পেল! হঠাৎ তারা দেখতে পেল ক্যাপ্টেন হুক নামে এক ভয়ংকর জলদস্যু তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। ক্যাপ্টেন হুক ছিল খুবই খারাপ প্রকৃতির। সে চাইছিল পিটারকে ধরতে। ক্যাপ্টেন হুককে দেখে তারা একটি পাহাড়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল।
পিটার বলল, ক্যাপ্টেন হুক কখনো আমাকে কিছু করতে পারবে না! কারণ আমি তাকে ভয় পাই না!
মায়া বলল, কিন্তু ক্যাপ্টেন হুক তো খুবই ভয়ংকর।
পিটার হেসে বলল, ভয় শুধুমাত্র মনের ভেতরেই থাকে। তুমি যদি ভয় না পাও। তবে কেউ তোমাকে ভয় দেখাতে পারবে না। কিছুক্ষণ পর ক্যাপ্টেন হুক চলে গেল। পিটার এবং মায়া আবার খেলতে লাগল।
একদিন মায়া পিটারকে বলল, পিটার, আমি জানি এখানে সব কিছু খুব মজার! কিন্তু আমি আমার মাকে ভীষণ মিস করছি। আমি বাড়ি যেতে চাই। পিটার কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, আচ্ছা মায়া তুমি কি জানো? তুমি যদি বড় হও তবে তোমাকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে? মায়া বলল, হ্যাঁ জানি তো! পিটার হেসে বলল, কিন্তু তুমি যদি চিরকাল ছোট থাক, তবে তোমাকে কোনো দায়িত্ব পালন করতে হবে না! তুমি সবসময় আনন্দ চিত্তে থাকবে, মজা করবে, খেলা করবে।
মায়া পিটারের কথা শুনে বলল, কিন্তু পিটার আমি বড় হতে চাই! তবে আমি আমার শিশু মনকে কখনোই হারাতে চাই না!
পিটার মায়ার হাত ধরে বলল, তাহলে তুমি চিরকাল আনন্দিত থাকবে, কারণ তোমার মধ্যে এক শিশুহৃদয় আছে।
তারপর মায়া পিটারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাড়ি ফিরে গেল। মায়া শপথ নিল, সে তার ভিতরের শিশুমনকে কখনোই হারাবে না! কারণ তার মধ্যে যত দিন শিশুমন থাকবে, ততদিন সে আনন্দ চিত্তে থাকবে! ছোট্ট পিটার যেমন শিশু হয়ে আনন্দ চিত্তে রয়েছে। মায়া ছোট্ট পিটারের কথা মনে করে আনন্দে হাসতে লাগল!