সুপ্রভাত ডেস্ক »
দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। সে যে হোক, দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে আমরা ধরবো।’
শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিক রাষ্ট্র পরিচালনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনও পিছিয়ে পড়েনি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ পিছিয়ে যাবে না। যে যতই চেষ্টা করুক, দেশকে ধ্বংস করতে পারবে না। এই স্বপ্নযাত্রার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে এ দেশের মানুষ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে সে লক্ষ্যেই আমরা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়ন করেছি ও উন্নয়ন বাজেট দিয়েছি। এখানে কমানোর কিছু নেই।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, এটি অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষী নয়, বরং এটি জনগণের জীবনমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য একটি উন্নয়ন বাজেট।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন পশ্চিমা দেশসহ অন্যান্য দেশে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক, তখন দেশের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক।
বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার (এডিপি) জন্য এবার বরাদ্দের পরিমাণ দুই কোটি ৬৫ লাখ টাকা বলেও জানান তিনি।
কৃষি খাতে বিভিন্ন উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, সরকারের নেওয়া নীতির সুফল মানুষ পাচ্ছে।
শনিবার বিকেলে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাজেটের মধ্যে আগামী দিনে আমরা যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল, সেটি বাস্তবায়নে সক্ষম হবো। সে ধারাবাহিকতা আমাদের আছে। আমরা একটা রাজনৈতিক দল করি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমাদের কিন্তু নিজেদের ঘোষণাপত্র আছে, আমরা কিন্তু নির্বাচনের আগে ইশতেহার ঘোষণা করি। এই ইশতেহার আমরা কখনো ভুলে যাই না। জাতির কাছে যে ওয়াদা দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমরা ক্ষমতায় এসেছি, তা পালন করি। এই বাজেট প্রণয়নকালীন আমাদের যে নির্বাচনী ইশতেহার, সেটির অগ্রাধিকার এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের যে দিক নির্দেশনা- সেটাও বাজেটে উঠে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গুলশান, বনানী ও বারিধারার মতো ধনী এলাকায় গ্রামের বদলে বেশি লোডশেডিং দেওয়া উচিত।
‘গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো সমৃদ্ধ এলাকায় গ্রামের পরিবর্তে আরও লোডশেডিং হওয়া উচিত। দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং তাদের [ধনীদের] মনে করিয়ে দেবে যে, তাদের বিলাসবহুল জীবনের জন্য বিদ্যুৎ কেবল আকাশ থেকে আসেনি, বরং এটা আমাদের কারণেই সম্ভব হয়েছে,’ সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যখন দেশের মানুষ গরিব ছিল তখন বিদ্যুতের চাহিদা কম ছিল। ‘মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতির সাথে সাথে বিদ্যুতের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছি,’ তিনি যোগ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস সর্ববৃহৎ বাজেট আমরা দিয়েছি। বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বাজেটের ওপর এ পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতাসহ ২৩৪ জন সংসদ সদস্য বক্তব্য রেখেছেন। তারা বাজেটের ওপর আলোকপাত করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন। এর বাইরে অনেকেই বাজেট নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বাজেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যে যাই করুন তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, কেউ কেউ বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলেছেন, কেউ বলেছেন ঘাটতি বাজেট। কিছুক্ষণ আগে বিরোধীদলীয় নেতা বললেন এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার কমাতে হবে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কমাতে হবে… ইত্যাদি। এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো সক্ষমতা আছে কিনা। চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাই তো আমাদের কাজ। চ্যালেঞ্জ নিয়েই তো আমরা চলতে চাই, চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।