যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই-ই কি হতে চলেছে

গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বন্ধ হয়ে গেছে ইউএসএইডের অর্থায়ন। ফলে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় প্রভাব পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে বেসরকারিভাবে পরিচালিত রোগ শনাক্তকরণ, গবেষণা ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড। হাসপাতালে মিলছে না ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার সেবা। এতে যক্ষ্মার নতুন ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যক্ষ্মা নির্মূলে গত দুই দশক ধরে অন্যান্য দাতা সংস্থার মতো বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা করেছে মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসএইড। যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ছয় মাস নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। নির্দিষ্ট মাত্রায় নিয়মিত এবং পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ না খেলে যক্ষ্মার জীবাণু ওই ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বাংলাদেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীদের অবহেলা ও অসচেতনতায় এই ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর টিবি বাড়ছে। যাদের একটা বড় অংশই মারা যান। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী কমাতে রাজধানীসহ দেশে সাত বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আলাদা চিকিৎসকের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হতো। এই প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন হতো ইউএসএইডের অর্থায়নে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছর বিশ্বে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৩৭৪ জন। এর মধ্যে ১০ শতাংশই শিশু। ২০২৩ সালে যক্ষ্মায় বিশ্বের ৪৪ হাজার মানুষ মারা গেছে। এখনও ১৭ শতাংশ রোগী শনাক্তের বাইরে। ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শনাক্তের বাইরে থাকা রোগীদের চিহ্নিত করে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।
২০২১ সালে ইউএসএইডের সহায়তায় রাজধানীর শ্যামলীতে দেশের প্রথম ওয়ানস্টপ যক্ষ্মা (টিবি) নামে এই সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়। একজন চিকিৎসক দিয়ে এ সেবা নিশ্চিত করা হতো। গত জানুয়ারিতে ইউএসএইডের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেলে ওই চিকিৎসককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
যক্ষ্মা প্রতিরোধে ইউএসএইডের সহায়তায় ২০১৮ সালে ‘জানাও’ নামে একটি অ্যাপ প্রস্তুত করা হয়। সারাদেশে ৫০০ চিকিৎসক নিয়ে পাইলট আকারে অ্যাপটির ব্যবহার শুরু হয়েছিল। সাফল্য দেখে এক পর্যায়ে এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। অ্যাপে নিবন্ধিত যে কোনো চিকিৎসক যক্ষ্মা রোগীর সন্ধান পেলে তাঁকে এ অ্যাপে নিবন্ধন করে দিতেন। এ পর্যন্ত অ্যাপের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিয়ে অন্তত ৭ হাজার রোগী যক্ষ্মা মুক্ত হয়েছেন। ইউএসএইডের অর্থায়ন বন্ধ হওয়ায় বর্তমানে অ্যাপটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আইসিডিডিআর,বিতে একই সঙ্গে বেশ কিছু গবেষণা প্রকল্প চলমান ছিল ইউএসএইডের সহায়তায়। এগুলো স্থগিত হওয়ায় নতুন চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উন্নয়ন থমকে গেছে।

সংকট কাটিয়ে উঠতে এসব প্রকল্প চলমান রাখতে হবে। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে যক্ষার ঝুঁকি কখনো কমবে না। ফলে যক্ষামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা বিফলে যাবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে বা অন্য কোনো দাতা সংস্থাকে যুক্ত করতে হবে নতুন করে।