রুদ্র দাস »
এক বনে রংবেরঙের ফুলের গন্ধে ভরা পরিবেশে বাস করত একদল কর্মঠ মৌমাছি। তারা সারাদিন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ কওে তা চাকে সঞ্চয় করত। এই দলেই ছিল ছোট্ট ও চঞ্চল একটি মৌমাছি, যার নাম ছিল মিষ্টু। মিষ্টু ছিল দারুণ খেলাধুলাপ্রিয়কিন্তু কাজ করতে তার একদমই ভালো লাগত না।
মিষ্টু প্রায়ই তার সঙ্গীদের বলত,
‘কেন এত কাজ করতে হবে? এভাবে কি সারাজীবন মধু সংগ্রহ করেই কাটাতে হবে? চল, একটু খেলি।’
অন্য মৌমাছিরা মাথা নাড়ত আর বলত,
‘মিষ্টু, আমরা কাজ না করলে শীতকালে খাবার পাবো না। পরিশ্রম করাই আমাদের জীবন।’
তবে মিষ্টু এসব কথা শুনেও পাত্তা দিত না। একদিন সে বনের অন্যদিকে চলে গেল। সেখানে সে দেখল রঙিন প্রজাপতিদের দল, যারা ফুলের ওপর নেচে বেড়াচ্ছে। মিষ্টু তাদের কাছে গিয়ে বলল,
‘তোমরা তো কোনো কাজ করো না, সারা দিন শুধু মজা করো! তোমাদের জীবন কত সুন্দর!’
একটি প্রজাপতি হেসে বলল,
‘হ্যাঁ, আমরা মজা করি, কিন্তু আমাদের জীবন খুবই ছোট। তাই আমরা ভবিষ্যতের চিন্তা করি না। তোমাদের মতো মৌমাছিদের ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে হয়। যদি তুমি পরিশ্রম না করো, শীতকালে কী করবে?’
মিষ্টু প্রজাপতিদের কথা শুনে ভেবে দেখল, তারা ঠিকই বলেছে। কিন্তু তারপরও সে ঠিকমতো কাজ শুরু করল না।
কয়েক দিন পর, বনে ভয়ংকর ঝড় এলো। ঝড়ে বনের সব ফুল ঝরে গেল, পাতা উড়ে গেল। মৌমাছিরা যারা পরিশ্রম করেছিল, তারা মধুচাকে ঢুকে নিরাপদে থাকল। কিন্তু মিষ্টু, যে মধু সংগ্রহ করেনি, ক্ষুধায় কাহিল হয়ে পড়ল।
মিষ্টু রানীর কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
‘রানী মা, আমি ভুল করেছি। আমি কাজ না করে শুধু খেলাধুলায় সময় নষ্ট করেছি। আমাকে দয়া করে চাকে থাকতে দিন।’
রানি তাকে স্নেহভরে বললেন,
‘তুমি যদি সত্যি নিজের ভুল বুঝে থাকো, তবে আজ থেকে পরিশ্রম করার শপথ নাও। দল ছাড়া কেউ নিরাপদ নয়। পরিশ্রম করলেই তুমি জীবনে সফল হবে।’
মিষ্টু রানির কথা মেনে নিল। ঝড় থেমে গেলে সে অন্য মৌমাছিদের সঙ্গে কাজ শুরু করল। ধীরে ধীরে মিষ্টু সবচেয়ে কর্মঠ মৌমাছি হয়ে উঠল। সে বুঝল, পরিশ্রম শুধু নিজের জীবন নয়, বরং সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।
এই গল্পটি শেখায়, পরিশ্রম ছাড়া জীবনে সাফল্য আসে না। অলসতা শুধু ক্ষতি ডেকে আনে, আর পরিশ্রম আমাদের জীবনকে সুন্দর ও সফল করে তোলে।