মোদীর আমন্ত্রণে দিল্লি সফরে শেখ হাসিনা

সই হবে বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লি যাচ্ছেন শুক্রবার। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্র ও শনিবার দিল্লি অবস্থান করবেন।

সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রথম বিদেশ সফর ভারতে করছেন। এ সফর উভয় দেশের সরকারের পরস্পরের প্রতি আস্থা ও নির্ভরতার একটি বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।

আঞ্চলিকভাবে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুই দেশের সহযোগিতা ও ভূমিকা কী হবে, সেটি নিয়ে দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে আলোচনা হবে।

সফরসূচি

২২শে জুন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র সালাম গ্রহণ ও গার্ড অব অনার পরিদর্শন করবেন।

সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে শেখ হাসিনা রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করবেন।

ওই দিনই হায়দ্রাবাদ হাউজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে একান্ত বৈঠক ও প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনা হবে।

সেখানে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও চুক্তি বিনিময়ের পর দুই নেতা প্রেস বিবৃতি দিবেন।

একই সাথে শেখ হাসিনার সম্মানে মধ্যাহৃ ভোজ, পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর এবং দুই প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনের আয়োজন হবে।

এর আগে শুক্রবার দিল্লি পৌঁছানোর পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

এছাড়া শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতির সাথেও সাক্ষাত করবেন।

কোন কোন বিষয়ে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি

ভারতের সাথে আগে হওয়া ঋণচুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।

পেঁয়াজ বা চিনির মতো জরুরি দরকারি পণ্যগুলোর বাংলাদেশে আমদানির সুযোগ যাতে নিরবচ্ছিন্ন থাকে ভারত যেন তা নিশ্চিত করে। এর আগে অনেক বারই দেখা গেছে পেঁয়াজসহ কিছু পণ্যের ওপর ভারত আকস্মিকভাবে রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ঘটনায় বাংলাদেশের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিলো।

এবার এনিয়ে আলোচনা ও সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বহুল আলোচিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে কোন অগ্রগতি না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন মনে করেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নতুন করে আলোচনায় আসার প্রেক্ষাপটে দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনাতেও এটি আসতে পারে।

কারণ চীন এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চাইছে অনেক দিন ধরেই। আবার ভারতও জানুয়ারির নির্বাচনের পরে এ প্রকল্পে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

“এখানে চূড়ান্তভাবে কী হবে বলা মুশকিল। হয়তো বাংলাদেশে চীনের ফুটপ্রিন্ট বেড়ে যাচ্ছে এ নিয়ে ভারতের তরফ থেকে উদ্বেগও আসতে পারে। আবার বাংলাদেশ হয়তো ভারতকে বুঝিয়ে বলতে পারে যে এনিয়ে ভারতের নিরাপত্তা-জনিত উদ্বেগের কোন কারণ থাকবে না।”

“সেক্ষেত্রে একটা লিমিটেড ওয়েতে (সীমিতভাবে) চীনকে তিস্তা পরিকল্পনায় কাজ করতে দিতে উভয় পক্ষ একমতও হতে পারে।”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কানেক্টিভিটি এবং উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে বড় অগ্রগতি হতে পারে এ সফরে। ভারতের উত্তর-পূর্ব এবং নেপাল বা ভুটানের সঙ্গে রেল কানেক্টিভিটি, পানি কানেক্টিভিটি, রোড কানেক্টিভিটি গুরুত্বপূর্ণ হবে।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, জ্বালানি, নতুন প্রযুক্তিসহ নানা বিষয়ে শীর্ষ বৈঠকে আলোচনা হবে। এ ছাড়া মহাকাশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল অর্থনীতির মতো বিষয়গুলো সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর অন্তত ১২ থেকে ১৪টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে। সব মিলিয়ে ১০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। এর মধ্যে যেসব চুক্তি বা সমঝোতার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে সেগুলোর কয়েকটি আবারও নবায়ন হবে।