সন্ধ্যায় সুন্দরবন দিয়ে অতিক্রম করবে ‘আম্পান’#
১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে#
১০ থেকে ১৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে#
নিজস্ব প্রতিবেদক :
আজ বুধবার সন্ধ্যায় সুন্দরবন দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে ‘আম্পান’। তবে অতিক্রমের সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার হতে পারে। একইসাথে সেসময় উপকূলে স্বাভাবিক জোয়ার থাকবে বলে ঝড়ের সাথে জোয়ারের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট বেড়ে জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৩২ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে এমনই তথ্য দেয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি ইতিমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বালেশ্বর এলাকায় আঘাত করেছে, পর্য়ায়ক্রমে কোলকাতার খড়গপুর এলাকায় আঘাত করে দুপুরের পর হলদিয়া হয়ে বাংলাদেশের সুন্দরবন দিয়ে তা উপকূল অতিক্রম করতে সন্ধ্যা হবে। কিন্তু এর অগ্রভাগ আঘাত করতে থাকবে বিকেল থেকে। এর প্রভাবে সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঝড়োহাওয়া ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্তারা জানান, উপকূলীয় এলাকার লোকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে এবং জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকার ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য মহাবিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। আর বর্তমান পদ্ধতিতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের পর ৮,৯ ও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত একই অর্থ বহন করে। যেহেতু ঝড়ের ডান দিকে থাকবে মোংলা ও পায়রা তথা দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল এলাকা, তাই সেসব এলাকার জন্য ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। চট্টগ্রাম কক্সবাজার এলাকা আরো ডান দিকে হওয়ায় এর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম থাকবে বলে সেখানে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া বিষয়ক উপাত্তগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যতো বেশি শক্তিশালী হয়ে এটি উপকূলে আঘাত করার কথা ছিল সেই শক্তি এখন আর নেই। এক সময় এর শক্তি ঘণ্টায় ২৪৫ কিলোমিটার থাকলেও এখন তা কমে ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। তবে এই মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ও কম শক্তিশালী নয়। সাধারণত ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারের অধিক বেগে কোনো ঝড় প্রবাহিত হলে আমরা তাকে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়ে থাকে।
হঠাৎ মহাবিপদ সংকেত কেন?
যেহেতু ঘূর্ণিঝড়টি সুন্দরবন উপকূল দিয়ে অতিক্রম করবে তাই আমাবশ্যার কারণে সাগরে স্বাভাবিক জোয়ার বেশি থাকে ৪ থেকে ৫ ফুট। এখন ঝড়ের কারণে এই জোয়ার আরো বেড়ে যেতে পারে ১০ ফুট। মূলত এ কারণে উপকূলীয় এলাকায় ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে মহাবিপদ সংকেত দেয়া হয়েছে। এবিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পতেঙ্গা কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াদি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘উপকূলের মানুষ যাতে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে যায় এবং দুর্যোগপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যায় সেজন্য মহাবিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। অন্যথায় মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া যাবে না।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর ঢাকা প্রধান কেন্দ্রের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘আমাদের প্রধান কাজ হলো জানমালের ক্ষতি কমানো। এই ক্ষতি কমাতে উপকূলের মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেজন্য সংকেত বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে প্রবাহিত একটি ঝড়ের সাথে অমাবশ্যার বাড়তি জোয়ার যুক্ত হলে স্বাভাবিকভাবেই উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস দেখা দেবে। এতে উপকূলে ক্ষয়-ক্ষতি বেড়ে যেতে পারে।
জলোচ্ছ্বাস কেন?
কাল অমাবশ্যা। অমাবশ্যায় সাধারণত সাগরে চার থেকে পাঁচ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ার দেখা দেয়। এবিষয়ে পতেঙ্গা কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ পরিদ আহমেদ বলেন, অমাবশ্যার আগের দিন জোয়ার বেশি থাকে। সেজন্য আজ বাড়তি জোয়ার হবে। এই বাড়তি জোয়ারের সাথে যুক্ত হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৩২ নম্বর বুলেটিন অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি আজ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৫১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা থেকে ৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা খেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেড় ২০০ থেকে ২২০ কিলোমিটার।
ঘূর্ণিঝড়টি আজ বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এজন্য মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে নয় নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রমের সময় উপকূলীয় এলাকায় প্রচ- গতিতে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ঘটাতে পারে। এজন্য সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং এসব এলাকার পাশ্ববর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে স্বাভাবিকের চাইতে ১০ থেকে ১৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এসময় এসময় এসব এলাকায় ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বঙ্গোপসাগরে এক বা একাধিক নিম্নচাপ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এসব নিম্নচাপ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনাও বলা হয়েছে। বছরের এসময়ে সাগরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে। এপ্রিল-মে ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম।