মেরু অঞ্চলের ‘পোলার নাইট’ : ২৪ ঘণ্টা অন্ধকারের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নেয় মানুষ

মেরু অঞ্চলে শীতকালে কয়েক সপ্তাহ বা মাসব্যাপী সূর্যের আলো দেখা যায় না। ছবি: রয়টার্স

সুপ্রভাত ডেস্ক  »

মেরু অঞ্চলে শীতকালে কয়েক সপ্তাহ বা মাসব্যাপী সূর্যের আলো দেখা যায় না। এ সময়টিতে মানুষের ঘুমের চক্রে প্রভাব পড়ে। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা কীভাবে ঘুমের বিষয়ে মানিয়ে নেন, তা থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

পোলার নাইটের সময় সূর্যের আলো অনুপস্থিত থাকলেও এটি পুরোপুরি অন্ধকার হয় না। বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তর থেকে সূর্যের ক্ষীণ রশ্মি নীল, গোলাপি ও বেগুনি রঙের মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। চাঁদের আলো, তারার ঝিলিক এবং বরফের প্রতিফলিত আলোর কারণে পরিবেশ উজ্জ্বল দেখায়।

তবে দীর্ঘ অন্ধকার অনেকের ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। শীতকালে সূর্যালোকের অভাবে অনেকেই বিষণ্নতায় ভোগেন, যাকে সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডার (এসএডি) বলা হয়। ইউরোপে ২-৮ শতাংশ মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত হন। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, পোলার অঞ্চলের আদিবাসী স্যামি জনগোষ্ঠী অপেক্ষাকৃত কম ঘুমের সমস্যায় ভোগেন।

নরওয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শীতকালকে ইতিবাচকভাবে দেখেন—যেমন, স্কি করা বা আগুনের পাশে সময় কাটানো উপভোগ করেন—তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

গবেষক কারি লাইবোউইটজ বলেন, যারা শীতকালকে নেতিবাচকভাবে দেখেন, তারা বড় আলো জ্বালিয়ে অন্ধকার ঠেকানোর চেষ্টা করেন, যা উল্টো সমস্যা সৃষ্টি করে।

পোলার নাইটের সময় মেলাটোনিন উৎপাদনের তারতম্য ঘুমের চক্রে প্রভাব ফেলে। তবে আলোর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকাংশে সমাধান করা যায়। রাতে হালকা আলো ব্যবহার করা এবং ধীরে ধীরে আলো কমানো মেলাটোনিন উৎপাদনকে সক্রিয় করে। এছাড়া নীল আলো সমৃদ্ধ বিশেষ ল্যাম্প বা ডিভাইস ব্যবহার ঘুমের মানোন্নয়ন করতে পারে।

সকালে শারীরিক ব্যায়াম ঘুমের চক্র স্থিতিশীল করতে সহায়তা করে। ফিনল্যান্ডের ইনারি অঞ্চলের বাসিন্দা এসথার বেরেলোভিচ প্রতিদিন দুই ঘণ্টা হাঁটা বা স্কি করেন। তিনি বলেন, মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা না হলে আমি বাইরে হাঁটতে যাই। আলো পাওয়ার সময়টা বাইরে কাটানো খুবই জরুরি।

কর্মস্থলে নির্ধারিত সময় মেনে চলা হলে ঘুমের চক্র কিছুটা ঠিক রাখা যায়। সুইডেনের কিরুনায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, শীতকালে মানুষ গড়ে ৩৯ মিনিট দেরিতে ঘুমাতে যান, ফলে তাদের ঘুমের পরিমাণ কমে যায়।