নিজস্ব প্রতিবেদক :
দোকানে মূল্যতালিকা কোথায়? জিজ্ঞাসা করতেই আঁতকে ওঠে ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম। একটু স্বাভাবিক হয়ে মালামালের ভিতর থেকে খুঁজে বের করেন মূল্যতালিকার বোর্ডটি। পরে বলেন, গতকাল তালিকাটি টাঙানো ছিল, দোকান খুলতে দেরি হয়েছে তাই মূল্যতালিকা টাঙানো হয়নি।
কামরুল ইসলামের আঁতকে ওঠা বা তালিকা খোঁজার অন্যতম কারণ ভোক্তা অধিকার কিংবা জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার ভয়। এটা ব্যবসায়ী কামরুল ইসলামের একার নয়, দোকানে মূল্যতালিকা না টাঙানো সব ব্যবসায়ীর মধ্যে একই প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। মূল্যতালিকা খুঁজে রেব করে টাঙানো কিংবা তালিকায় মূল্য ঠিক করার কাজটি কেবল ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। অন্য সময় মূল্য তালিকার টাঙানোর কথা ব্যবসায়ীরা ভুলে যান।
গতকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নগরের বহদ্দারহাট, ষোলশহর কর্ণফুলী কমপ্লেক্স, কাজীর দেউড়ি ও চকবাজার কাঁচাবাজারে সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে ঘুরে দেখা যায়, বাজারের প্রবেশ মুখের দোকানগুলোতে মূল্যতালিকা টাঙানো থাকলেও ভিতরের দোকানগুলোতে মূল্য তালিকা চোখে পড়েনি। একই চিত্র কর্ণফুলী কমপ্লেক্স, কাজীর দেউড়ি কিংবা চকবাজার কাঁচাবাজারের। মূল্যতালিকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের এম কে স্টোরের মালিক আবুল কাশেম জানান, ‘মূল্যতালিকা আছে কিন্তু ভুলে টাঙানো হয়নি। প্রতিনিয়ত সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় প্রতিদিন মূল্য তালিকা সংশোধন করা হয় না।’ মূল্যতালিকা না টাঙনোতে কখনো জরিমানা দিতে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে একই বাজারের সেহাবীয়া পোল্ট্রি ফার্মের মালিম মো. হিরু বলেন, ‘মূল্যতালিকা না থাকায় কয়েক বার জরিমানা গুনেছি। তালিকা আছে কিন্তু ভুলে টাঙানো হয়নি, এখন টাঙাচ্ছি।’
মূল্যতালিকার ব্যাপারে জানতে চাইলে কর্ণফুলী কমপ্লেক্সের বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর উত্তর, সকালে ঝামেলা থাকায় ভুলে টাঙানো হয়নি। অনেককে দেখা যায় তালিকা না টাঙানোয় দোকানের কর্মচারীদের ধমক দিয়ে নিজেদের কাজে ব্যস্ত হতে। আবার যাদের মূল্যতালিকা টাঙানো ছিল তালিকার সাথে পণ্যের দামের কোন মিল পাওয়া যায়নি। এরকম চিত্র দেখা যায় মেসার্স হাজী স্টোরে, তাদের টাঙানো মূল্য তালিকার দাম আর পণ্যের দামের সাথে কোন মিল পাওয়া যায়নি। তালিকায় প্রতি কেজি আদা ৮০ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। তালিকার মূল্যের সাথে পণ্যের মূল্যের পার্থক্যের কারণ জানতে চাইলে দোকানের মালিক মো. মাসুদ জানায়, গতকালকে আদার দাম বেড়ে গেছে, সকালে ঝামেলা ছিল তাই তালিকা ঠিক করার সময় পাইনি।
মূল্যতালিকা না টাঙানোর প্রসঙ্গে কর্ণফুলী কমপ্লেক্সে বাজার করতে আসা ক্রেতা কাজী আমান উল্লাহ ক্ষোভের সুরে বলেন, তারা (ব্যবসায়ী) পাইকারিতে কম দামে এনে বেশি দামে বিক্রি করার জন্য জন্য মূল্যতালিকা টাঙায় না। তারা যে ঐক্যবদ্ধ তাদের বিরুদ্ধে কিছুই বলা যায় না। আমরা তো তাদের কাছে জিম্মি, তাই তারা যে দামে বিক্রি করে সে দামে কিনতে হচ্ছে। যদি বাজারে মূল্যতালিকা টাঙানো থাকে তাহলে সবাইকে একই দামে পণ্য বিক্রি করতে হবে, সে ভয়ে তারা তালিকা টাঙায় না।
মূল্য তালিকা না টাঙানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীদের মূল্যতালিকা না টাঙানোর প্রবণতা দীর্ঘ দিনের। যতক্ষণ জেলা প্রশাসন কিংবা ভোক্তা অধিকারের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় বাজারে ততক্ষণ মূল্যতালিকা টাঙানো থাকে। এটা ব্যবসায়ীদের আইন মানার ব্যাপারে উদাসীনতা ও দীর্ঘদিনের আইন না মানার সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। তিনি আরো বলেন, আইন না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়, এতো কম জরিমানা ব্যবসায়ীদের আইন না মানার সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে পারবে না। দোষীদের শাস্তি বাড়ানো ছাড়া মূল্যতালিকা প্রদর্শন নিশ্চিত করা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ব্যবসায়ীদের বার বার জরিমানা করেও তাদের মূল্য তালিকা টাঙানো নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। গত সপ্তাহেও বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা মিটিং করেছি। মূল্য তালিকা টাঙাবে বলে আমাদের সঙ্গে তারা ওয়াদা করেছিলেন। মূল্যতালিকা নিশ্চিতকরণে আগামীতে জরিমানার অঙ্ক বাড়ানো হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ