মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন

ফুলগাজী-পরশুরামে পানিবন্দি ৩ হাজার পরিবার

সুপ্রভাত ডেস্ক »

ফেনীর মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের আরেকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর আগে নদীর ফুলগাজীর দৌলতপুর অংশে দৌলতপুরে পাঁচটি স্থান ভেঙেছে। এ নিয়ে গত তিনদিনে বেড়িবাঁধের ছয়টি স্থান ভেঙেছে। ভাঙা স্থান দিয়ে হু হু করে লোকালয়ে ঢুকছে পানি।

এরই মধ্যে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের তিন হাজার একশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়ি-ঘর; ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। নষ্ট হচ্চে বীজতলা ও সবজি।

ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানান, মুহুরী নদীর পানি বুধবার সকালে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, “বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে নতুন করে আর ভাঙার সম্ভাবনা নেই।”

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, তার উপজেলায় মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের পাঁচটি স্থান ভেঙে গেছে। এতে ফুলগাজী সদর, আমজাদ হাট ও দরবারপুর ইউনিয়নের ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ১ হাজার ৭০০ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে।

এছাড়া এসব ইউনিয়নের আমজাদ হাট, দরবারপুর, বসন্তপুর, জগতপুর, নিলক্ষী, গোসাইপুর, করইয়া, গাবতলা গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯০০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বুধবারও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে চাল, মুড়ি ও চিড়া বিতরণ করা হবে বলে জানান ইউএনও।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণের বাঁধের দক্ষিণ শালধর এলাকার জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন একটি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে দক্ষিণ শালধর, মালিপাথর, ঘোষাইপুর এবং পাগলিরকুল এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

এ উপজেলায় ১ হাজার ৪০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামের ৭০ বছর বয়সী হেঞ্জু মিয়া বলেন, “দুইদিন ধরে পানিবন্দি থাকায় ঘরে চুলা জ্বলছে না। সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণ সহযোগিতা বুধবার দুপুর পর্যন্ত পাই নাই।”

একই উপজেলার শালধর গ্রামের স্কুল শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার বলেন , “স্কুলে মূল্যায়ন পরীক্ষা চলছে। কিন্তু পানি মাড়িয়ে যেতে খুবই অসুবিধা হয়। বন্যার এই সময় পরীক্ষা স্থগিত করে স্কুল বন্ধ দিলে পানিবন্দি শিক্ষার্থীদের উপকার হতো।”

মালিপাথর গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ হাসিনা বেগম বলেন, “ঘরে পানি থাকায় চুলা জ্বালানো যাচ্ছে না। ঘরের বৃদ্ধ ও বাচ্চাদের নিয়ে দুদিন ধরে শুকনা খাবার খাচ্ছি। ঘর থেকে পানি নামতে আরও দুই-এক দিন সময় লাগতে পারে। এখনও কেউ আমাদের ত্রাণ দেয়নি।”

উত্তর দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিউল্লাহ সোহেল বলছিলেন, দুদিন ধরে তার বাড়ি পানিতে ডুবে আছে। আকস্মিক বন্যায় তার পুকুরের প্রায় দুই লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। পানির তীব্র স্রোতে গ্রামীণ সড়ক ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে।

নিলক্ষী গ্রামের আলম মিয়া বলেন, তার তিনকানি জমিতে বীজবপন করা হয়েছিল। পানিতে সব ভেসে গেছে। পানি নামলে নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে প্রচুর অর্থ প্রয়োজন। সাহায্য না পেলে আগামী অর্থ বছরে না খেয়ে থাকতে হবে।

ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরামের শালধর অংশে যে ভাঙন হয়েছে সেখান দিয়ে পানি ঢুকে ফুলগাজী নিলক্ষী গ্রাম দিয়ে নামছে। এতে করে নতুন নতুন গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। এসব এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, “মুহুরী নদীর পানি বুধবার বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। নদীর পানি কমলে ভাঙন এলাকা মেরামত করা হবে।”

এদিকে মঙ্গলবার মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাজ শুরু হবে। এ নদীতে টেকসই বাঁধ নির্মাণ হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্লাবন হবে না বলে আশা করছি।”