নিজস্ব প্রতিবেদক »
বাজারে রেকর্ড ছাড়িয়েছে ব্রয়লারসহ সকল ধরনের মুরগি ও গরুর মাংসের দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগি দফায় দফায় বেড়ে গত দুইদিন কেজিপ্রতি আড়াইশো টাকা ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে গরুর মাংসে কেজিতে হাজার টাকা ছুঁয়েছে। মঙ্গলবার ও বুধবার নগরীর রিয়াজউদ্দিন ও বক্সিরহাট বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় রীতিমতো দিশেহারা ক্রেতারা। অনেক ক্রেতা দাম শুনে মাংস না কিনে ফেরত যান। আর অনেককেই চাহিদার বিপরীতে কম পরিমাণে মাংস কিনতে দেখা গেছে।
গতকাল রিয়াজউদ্দিন বাজার ও বক্সিরহাটে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজি ২৫০ থেকে ২৫৫ টাকা, সোনালি ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। আর এই দুই বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে কেজিতে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায়। গরুর মাংস গত তিনদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করছে। এর আগে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। তাছাড়া গত একমাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে দাম বেড়েছে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা।
বক্সিরহাটের আমিন পোল্ট্রির মালিক মো. আমিন বলেন, ‘মুরগির দাম আমাদের কেনা বেশি পড়েছে তাই কিছু টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। শবেবরাত উপলক্ষে কেজিতে ২৫০ থেকে ২৫৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আমাদের কিছু করার নেই। কোথায়, কিভাবে দাম বাড়ছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে প্রশাসনকে।’
বক্সির হাটের শাহ আমানত মাংসের দোকানের মালিক জমির সওদাগর বলেন, ‘হাটে গরুর দাম বেড়েছে। একদিনে কম করে হলেও গরু মণপ্রতি ১০ হাজার টাকা বেড়েছে। তাই গরুর মাংস কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
টিসিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গরুর মাংসের দাম বছরের ব্যবধানে ১১ শতাংশ বাড়িয়ে গতকাল কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু নগরীর বাজারে আরো প্রায় ২০০ টাকা বাড়তিতে ৯০০ থেকে ৯৫০ দামে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির এক সপ্তাহ আগেও ছিল ২০৫ থেকে ২২০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে ২৫০ থেকে ২৫৫ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এক মাসে আগে অর্থাৎ গত ৮ ফেব্রুয়ারি ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৩৩.৩২ শতাংশের উপরে। ঠিক এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২২ সালের ৮ মার্চ ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকায়। ওই হিসাবে এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৫২.৩৮ শতাংশ।
রেয়াজউদ্দিনবাজারে গরুর মাংস কিনতে আসা বাবর আলী বলেন, ‘প্রশাসন মাছ, মাংসসহ নিত্যপণ্যের দামের তালিকা ঘোষণা দিলেও এখানে কোনো মাংসের দোকানে মূল্যতালিকা টাঙানো হয়নি। যার যেমন খুশি নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছে।
বাজারে মূল্যতালিকা না টাঙানোর বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়াজউদ্দিন বাজারের মহিম পোল্ট্রির ম্যানেজার মো. জসিম বলেন, ‘মুরগির দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় উঠা-নামা করে। তাছাড়া সাইজ ছোট-বড় দেখে দাম নির্ধারণ করতে হয়, যার ফলে প্রতিমুহূর্তে মূল্যতালিকা টাঙানো সম্ভব নয়।’
এদিকে ব্যবসায়ীদের এসব যুক্তি আমলে না নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ‘ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই সরকারের আইন মেনে করতে হবে। ভোক্তার অধিকার রক্ষায় দোকানে মূল্যতালিকা দৃশ্যমান রাখতে হবে।
গরু, মুরগি ও ডিমের বাজারে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ঢিলেঢালাভাবে পরিচালনা হচ্ছে ক্রেতাদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিকারের সহ পরিচালক ফয়েজউল্লাহ বলেন, ‘ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে দেশব্যাপী মুরগির বাজারসহ নিত্যপণ্যের বাজারগুলোতে একযোগে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে নগরীর বিভিন্ন বাজারে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। ক্রেতারা যে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে তা ভুল। তাদেরকে বলুন ব্যবসায়ীদের অনিয়ম তুলে ধরে আমাদের কাছে সরাসরি অভিযোগ জানাতে। আমরা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
গরু ও মুরগির দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা গতকালও ব্যবসায়ীদের সাথে বসেছি। তাদেরকে সতর্কও করা হয়েছে। তারা আমাদেরকে জানান কোনভাবে বাজারকে অস্থিতিশীল করবেন না। তবুও গরুর ও মুরগির বাজারের বিষয়ে কেউ অভিযোগ জানালে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’