ইজারা দিলেও পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই
রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
মিরসরাইয়ের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ঝর্ণাগুলো দেখতে গিয়ে প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছে পর্যটকরা। বর্ষায় অসর্তকতার কারণে ঝরছে প্রাণ। সর্বশেষ গতকাল সোমবার বিকালে খইয়াছরা ইউনিয়নের নাপিত্তাছরা ঝর্ণা এলাকায় তানভীর হোসেন নামে এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার করে মিরসরাই থানা পুলিশ। এর আগের দিন রোববার সন্ধ্যায় ইশতিয়াক নামে আরো এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার করা হয়। গত কয়েক বছরে এভাবে ১৫ জন পর্যটক ঝর্ণায় পড়ে নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে চলতি বছর প্রায় ২৮ লাখ টাকায় টিএস আর ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ঝর্ণাগুলো ইজারা দেয়া হয়। জনপ্রতি পর্যটকের কাছ নেয়া হয় ২০ টাকা। ইজারা দেওয়া হলেও বন বিভাগ ও ইজাদারের উদাসীনতায় এমন দুর্ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেছেন, আগামীতে ঝর্ণাগুলো ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের সমন্বয়ে ইজারা দেয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখবেন।
সূত্র জানায়, ঝর্ণা দেখতে এসে গত কয়েক বছরে কমপক্ষে ১৫ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ সোমবার বিকালে তানভীর নামে এক পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার করে ডুবুরি দল। এর আগের দিন রোববার ইশতিয়াক নামে এক পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ফেনী থেকে আসা ফয়েজ আহমদ নামে এক পর্যটক পা পিছলে পড়ে নিহত হন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪ জন। একই বছরের ২৯ আগস্ট দেলোয়ার হোসেন নামে চট্টগ্রামের এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়। ১৫ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে আসা মেহেদী হাসান (২২) নামে একজন প্রকৌশল ছাত্রের রুপসী ঝর্ণায় নির্মমভাবে মৃত্যু হয়। একই বছরের ২৬ জুলাই ঢাকা থেকে আসা আবু আলী আল হোসাই মেমোরী (৩০) নামের প্রকৌশলী অসতর্কভাবে ছবি তুলতে গিয়ে পিছলে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে খৈয়াছরা ঝর্ণায়। ওই বছরের ১২ জুলাই বোয়ালিয়া ঝর্ণা দেখতে আসা ১৫ ছাত্রছাত্রী অসতর্কতার জন্য ঝর্ণার পথে ছরায় পানি বেড়ে যাওয়ায় আটকা পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। চলতি বছরের ১৯ জুন নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা এলাকা থেকে চট্টগ্রাম থেকে আসা ইশতিয়াক (২২) নামে এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার করে মিরসরাই থানা পুলিশ। সর্বশেষ গত সোমবার নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা এলাকা থেকে তানভীর নামে এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে তানভীরের ভাই তৌফিক এখনো নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়া গত তিন বছরে এভাবে অন্তত ১৫ জন সম্ভাবনাময় তরুণ প্রাণ হারায় এই ঝর্ণা দেখতে এসে।
পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে খৈয়াছড়া ইউনিয়নের নাপিত্তাছরা ঝর্ণার দায়িত্বে থাকা বারইয়াঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আলতাফ হোসেন বলেন, পর্যটকদের টিকেট দেয়ার সময় বিপজ্জনক স্থানগুলোতে না যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু পর্যটকরা নির্দেশনা না মেনে বিপদে পতিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, ইজারা দেয়া হলেও পর্যটকদের নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা রাখেনি ইজাদার ও বন বিভাগ। তাই আগামীতে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের সমন্বয়ে ঝর্ণাগুলো ইজারা দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয়া হবে।