মহাসড়কে মহড়া
নিজস্ব প্রতিনিধি, মিরসরাই :
মিরসরাইয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে এগারোটায় মিরসরাই সদরে দুই পক্ষের এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৮ জন।
এ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেনের বাড়িতেও হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার সময় পুরো মিরসরাই সদরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে কিছুক্ষণের জন্য মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কে চলে ছাত্রলীগের মহড়া।
আহতরা হলেন- আলেয়া বেগম, এম হান্নান, আরিফ, আল আমিন, মুন্না, রিয়াজুল ইসলাম, অভিসহ ৮ জন।
এ সময় থেমে থেমে বোমা বিস্ফোরণ হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩ রাউন্ড টিয়ার শেল ও ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। এছাড়া ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আনা হয়।
জানা গেছে, শনিবার সকালে মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ। এসময় মাসুদ করিম রানাকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
নতুন কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ করিম রানা জানান, শনিবার সকালে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি মিছিল বের করে। ওই মিছিলে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেনের বাড়িতে হামলার অভিযোগ সত্য নয়।
সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন জানান, কোন প্রকার আলাপ আলোচনা না করেই হঠাৎ করে অছাত্রদের নিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে উত্তর জেলা ছাত্রলীগ। সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তারা আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। কর্মী সমর্থকদের বেধড়ক মারধর করে জখম ও ধারালো অস্ত্রের মহড়া দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এ সময় আমার বাড়ির বাড়াটিয়া আলেয়া বেগম, হান্নান, আরিফসহ অনেকেই স্পিন্টারের আঘাতে আহত হয়। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।
জানা গেছে, সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটি ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর গঠন করা হয়েছিল। সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী ওই কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও সাড়ে তিন বছর পর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এছাড়া বিলুপ্ত কমিটির এক সদস্য সম্প্রতি মাদকসহ র্যাব-৭ এর হাতে ধরা পড়ে। তাই বিভিন্ন কারণে বিলুপ্ত হওয়া কমিটির প্রতি উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। তাছাড়া ওই কমিটি সম্প্রতি কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করে রাতের আঁধারে বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটি গঠন করতে শুরু করেছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকালে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ সংর্ঘষে লিপ্ত হয়। এসময় উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়।
সংর্ঘষ চলাকালীন মিরসরাই থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল ও শটগানের ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে পুলিশ।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শনিবার সন্ধ্যার ৬টায় উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন তপুর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দেয়া হলে তিনি এই প্রতিবেদকের কল রিসিভ করেননি।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, কমিটি গঠনকে কেন্দ্র উপজেলা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩ রাউন্ড টিয়ার শেল ও ২০ রাউন্ড শর্ট গানের গুলি ব্যবহার করেছে। বর্তমানে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।