মিয়ানমারের স্থানীয় গণমাধ্যম নারিনজারা এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত শুক্রবার আরাকান আর্মি রাখাইনের বন্দরনগরী পকতাও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের পর ম্রাক উ, মিনবিয়া, কিয়াকতো ও রাথিডং শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াই শুরু করে। শুক্রবার ভোরে কালাদান উপত্যকার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সেনাবাহিনীর নবম কমান্ড এলাকায় হামলা চালালে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়। কিয়াকতো এলাকায় অবস্থিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নবম কমান্ড এলাকাকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
রেডিও ফ্রি এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর লড়াইয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাখাইনের কয়েক হাজার অধিবাসী রাজ্য ছেড়ে চলে গেছেন। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র হতে পারে এমন আশঙ্কায় লোকজন এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে লাগাতার সংঘর্ষের খবরের মধ্যে একটি গুলি এসে পড়েছে কক্সবাজারের টেকনাফের একটি বাড়িতে। গতকাল এ ঘটনা ঘটে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের লাগোয়া মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যদের ‘সর্বোচ্চ সতর্ক’ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এ বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান। রোববার মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ সংলগ্ন কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
মিয়ানমারের এ পরিস্থিতি আবার নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পক্ষ। কারণ গত কয়েকমাস ধরে চলা সংঘাতে ইতিমধ্যে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মিয়ানমারে অনেক নাগরিক সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অনেক সদস্যও আশ্রয় নিয়েছে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে।
গত শুক্রবার রাখাইনের বুচিডং ও ফুমালি এলাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। রাখাইন ও কক্সবাজারের স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবারও রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে এদিক-সেদিক যাওয়ার চেষ্টা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা যাতে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ না করে, সে জন্য বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
ওই সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, রাখাইনে চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গারা বিচ্ছিন্নভাবে দু-এক দিন ধরে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে। তবে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার হওয়ায় মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী পুনরায় আদিনিবাসে ফিরে গেছে।
নতুন করে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সরকারের অনীহার বিষয়টি ইঙ্গিত করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মানবতার কারণে রোহিঙ্গাদের তখন স্থান দিয়েছিলাম। যেসব রোহিঙ্গা আমাদের দেশে এসেছে, তাদের কারণে এখানে নিরাপত্তা ও পরিবেশগত সমস্যা তৈরি হয়েছে। শিবিরগুলো উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিস্তারের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো রোহিঙ্গা শিবির থেকে তাদের সদস্য নিয়োগ করার চেষ্টা করে।’
বাংলাদেশের জন্য একটি স্থায়ী সমস্যা তৈরি করেছে রোহিঙ্গারা ফলে নতুন করে আর একজন রোহিঙ্গাও যেন বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে সরকারকে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ