সুপ্রভাত ডেস্ক »
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমরা রাখি না। যেটি ঘটছে সেটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ গণ্ডগোল। সেখানে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সাথে আরাকান বাহিনীসহ অন্যদের সংঘাত চলছে এবং সে কারণে মাঝেমধ্যে দুই একটি গোলা আমাদের দেশে এসে পড়েছে এবং দুজন মানুষেরও মৃত্যু হয়েছে, এটা সঠিক। সম্প্রতি মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ফৌজদারহাট-বন্দর সড়ক সংলগ্ন ডিসি পার্কে জেলা প্রশাসন আয়োজিত মাল্টি কালচারাল ফেস্টিভ্যাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পূর্বে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার থেকে তাদের সীমান্ত বাহিনী ও সেনাবাহিনীসহ তাদের পরিবারের বেশ কিছু সদস্য আমাদের দেশে পালিয়ে এসেছে। তাদেরকে ফেরত নিয়ে যাবার জন্য মিয়ানমার ইতিমধ্যে সম্মতি প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আমাদের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক হয়েছে। কোন্ প্রক্রিয়ায় তাদেরকে ফেরত নিয়ে যাবে সেটি চূড়ান্ত করার বিষয়, এখানে পররাষ্ট্র নীতির কোনো বিষয় নাই।
শুধু আমাদের দেশে মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে তা নয়, ভারতেও ঢুকেছে কয়েকশ লোক। তাদেরকেও তারা ফেরত নিয়ে গেছে- বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরাকান আর্মি মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে অবস্থান নেয়া নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আপনারা জানেন, ইতিমধ্যে আমি ভারতসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেছি। ন্যাম সামিটে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে দেখা হয়েছে, সেখানে আমি তাকে বলেছি যে অন্তত প্রত্যাবাসনটা শুরু করার জন্য। তার কথাবার্তায় আমার যেটি মনে হয়েছে, মিয়ানমার প্রত্যাবাসন শুরুর ব্যাপারে একমত। কিন্তু তাদের এখনকার অভ্যন্তরীণ যে সংকটগুলো চলছে, সেই কারণে এই মুহূর্তে তারা পারছে না।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত যে সমস্ত মানুষ আমাদের দেশে আছে, তাদেরকে সসম্মানে নাগরিক অধিকার দিয়ে ফেরত পাঠানোই একমাত্র সমাধান। সেই সমাধানের লক্ষ্যেই কাজ করছি।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে বিএনপি’র এখন কোনো রাজনীতি নেই। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তারা যে প্রচণ্ড ভুল করেছে, এটি যে তাদের সুসাইডাল ডিসিশন ছিল, এজন্য তাদের নেতারা এখন কর্মীদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের কর্মীরা এখন প্রচণ্ডভাবে হতাশ, সেই হতাশা কাটানোর জন্য নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে তারা যে এখনো টিকে আছে সেটিই প্রমাণ করার চেষ্টা করছে এবং নানা ধরনের কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে।
এরপর জেলা প্রশাসন আয়োজিত মাল্টি কালচারাল ফেস্টিভ্যাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য গত ১৫ বছরে বহু প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে নদীর তলদেশ দিয়ে প্রথম টানেল হয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে। এখানে বে-টার্মিনাল নির্মিত হতে যাচ্ছে। সেটি নির্মিত হলে এটি আরেকটি চট্টগ্রাম বন্দর হবে। এখন চট্টগ্রাম বন্দরের সব মিলিয়ে দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৬ কিলোমিটার। আর বে-টার্মিনাল হবে ১০ কিলোমিটার। বে-টার্মিনালের ড্রাফট হবে ১২ মিটার। সেটির কার্যক্রম শিগগির শুরু হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে। এরপর এখানে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে সেটি অভাবনীয়।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে মাল্টি কালচারাল ফেস্টিভ্যাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত লিও টিটল আউসান জুনিয়র, এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম ও ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ড. রাজীব রঞ্জন। স্বাগত বক্তব্য দেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম।
মিয়ানমারের সংঘাত দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়
ডিসি পার্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী