সুপ্রভাত ডেস্ক
চট্টগ্রামে মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের করা মামলায় এ দম্পতির দুই সন্তানের সাথে কথা বলতে চায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই।
এ তদন্ত সংস্থার পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক জানান, এ বিষয়ে তারা ইতোমধ্যে আদালতে আবেদন করেছেন। সপ্তাহ খানেক আগে পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে ওই আবেদন করা হলেও এখনও শুনানি হয়নি।
একই ঘটনায় মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের করা মামলায় গেল বছর পিবিআইকে মাগুরায় গিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে মিতু-বাবুল দম্পতির সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ ও জবানবন্দি নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল আদালত।
তবে আদালতের ওই আদেশের পর তখনকার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা আর বাবুলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলে দাবি বাবুলের ভাইয়ের।
বাবুলের আইনজীবী বলছেন, আদালত একই বিষয়ে আগে একটি আদেশ দেওয়ার পরও আবার আবেদন করার উদ্দেশ্য ‘মানসিক টর্চার করা’।
মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘আগে আবেদন করা হয়েছিল মিতুর বাবার করা মামলায়। এবারের আবেদন বাবুল আক্তারের করা মামলায়। তদন্ত কাজ চলছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ছেলের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েটির সাথেও আমরা কথা বলতে চাই। সেজন্যই আবেদন করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে বাবুল আক্তারের ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আদালত আগেই আদেশ দিয়েছেন। তখন যেহেতু করোনার প্রকোপ ছিল, আমরা বলেছিলাম মাগুরায় এসে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। আদালত তা মঞ্জুর করেছিলেন।
‘কিন্তু এরপর তখনকার আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) আর যোগাযোগ করেননি। এমনকি আমরা আইওর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। তার পরও তারা মাগুরা আসেননি। এখন যদি কথা বলার প্রয়োজন হয় বলবে, তাতে সমস্যা কোথায়। তবে এ বিষয়ে আমরা এখনো কিছুই জানি না। আদালদের নির্দেশ পেলে, কথা বলবে।’ গত বছরের ৩০ জুন হাবিবুর রহমানের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই মাগুরা গিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রবেশন অফিসারের উপস্থিতিতে বাবুল-মিতুর সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ ও সাক্ষ্যগ্রহণ করতে আদেশ দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭। বাবুলের পরিবার মাগুরা পৌর সদরের কাউন্সিলর পাড়ার বাসিন্দা।
তার আগে ১৩ জুন মামলার সে সময়ের তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষাপটে মিতু-বাবুল দম্পতির দুই সন্তানকে ১৫ দিনের মধ্যে আইওর কাছে হাজির করতে বাবুলের বাবা আব্দুল ওয়াদুদু মিয়া ও ভাই হাবিবুর রহমান লাবুকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
জানতে চাইলে বাবুলের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘যে আবেদনের কথা বলা হচ্ছে সে বিষয়ে আমরা এখনো কিছু জানি না। কাল আদালতে গিয়ে খোঁজ নেব। নিশ্চয় আদালত শুনানির দিন ধার্য করবেন। তখন শুনানি করব।
‘যেহেতু এ বিষয়ে আগের একটি আদেশ আছে, তার পরও আরেকটি আবেদন মানসিক টর্চারের শামিল। আগের আদেশের অগ্রগতি কী সেটাও আমরা আদালতের মাধ্যমে জানতে চাইব।’
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন তখনকার পুলিশ সুপার বাবুল। তার ঠিক আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন বাবুল আক্তার। কয়েক মাস পর পুলিশের চাকরি ছাড়তে হয়েছিল তাকে।
তদন্ত করতে গিয়ে খোদ বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে গত বছরের মে মাসে ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। খবর বিডিনিউজের।
এরপরই বাবুলকে আসামি করে নতুন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। সেই মামলায় বাবুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সিআইডি বা অন্য কোনো সংস্থার কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মাধ্যমে মিতু হত্যার ঘটনায় নিজের করা মামলাটির পুনঃতদন্ত চেয়েছিলেন বাবুল আক্তার।
সে আবেদনের শুনানি করে বিচারক গত ৩ নভেম্বর পিবিআইকে অধিকতর তদন্ত করার আদেশ দেন। পরে পিবিআইয়ের আবেদনে বাবুলের করা মামলাতেই তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
এ মুহূর্তের সংবাদ