মা মাছ ডিম ছেড়েছে হালদায়

সুপ্রভাত ডেস্ক »

দক্ষিণ এশিয়ায় কার্প জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাত ২টার পর থেকে নদীতে ডিম মিলতে শুরু করে। এর আগে দিনভর নৌকা নিয়ে হালদায় অবস্থান করে ছিলেন ডিম সংগ্রহকারীরা।

নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার দিনভর চট্টগ্রামে বৃষ্টি ঝরেছে। সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। রাতে হয় অতি ভারি বৃষ্টি।

রাউজান উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন  জানান, রাতে হালদার মা মাছ ডিম ছেড়েছে। রাতভর ডিম সংগ্রহ চলেছে। এখনো নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম সংগ্রহ করা হচ্ছে।

হালদার ডিম সংগ্রহকারী রওশনঙ্গীর আলম বলেন, “রাতে ২টার পর থেকে আমরা ডিম পেতে শুরু করি। এবার ভালো ডিম পাওয়া যাচ্ছে। সংগ্রহ শেষ হলে বোঝা যাবে কী পরিমাণ ডিম মিলেছে।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, “হালদায় মা মাছ বহুল প্রত্যাশিত ডিম ছেড়েছে। গতরাত প্রায় দুইটা থেকে স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহ শুরু করে।

“প্রচণ্ড বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ডিম সংগ্রহ এখনো পর্যন্ত অব্যাহত আছে। আশা করছি, এবছর ভালো ডিম সংগৃহীত হবে।”

হালদা নদীতে বছরের এরকম সময়ে (এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত) বজ্রসহ বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নামলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ার ও ভাটার সময়ে নিষিক্ত ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ।

নদীতে মা মাছের ছাড়া সেই নিষিক্ত ডিম বিশেষ ধরনের জাল দিয়ে সংগ্রহ করা হয়। পরে হ্যাচারিতে তা থেকে রেণু পোনার জন্ম হয়।

হালদা যেখানে কর্ণফুলীর সঙ্গে মিশেছে, সেই কালুরঘাট সেতুর কাছের অংশ থেকে উজানে মদুনাঘাট হয়ে নাজিরহাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশে নদীর দুই তীরে হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি এই তিন উপজেলা।

মদুনাঘাট থেকে সমিতির হাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে হাটাহাজারী ও রাউজান উপজেলা সংলগ্ন অংশেই মেলে নিষিক্ত ডিম। এই অংশেই মা মাছের আনাগোনা বেশি।

চলতি মৌসুমে ইতিমধ্যে নদীতে মা মাছের আনাগোনা বাড়তে থাকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল ছিল না নদীতে।

তাই গত দুই মাস নদীতে নৌকা নিয়ে মাছের ডিম ছাড়ার অপেক্ষায় আছে হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা।

এর মধ্যে চলতি সপ্তাহে দুবার নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছেরা। নদীতে ডিম ছাড়ার উপযুক্ত পরিবেশ আছে কি না তা যাচাই করতে অল্প পরিমাণে ডিম ছাড়ে মা মাছ, যা নমুনা ডিম হিসেবে পরিচিত।