নিজস্ব প্রতিবেদক »
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে দেশ জুড়ে কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, আবার কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি আজ শনিবার থেকে কমে আসার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়াবিদেরা। সেই সঙ্গে তারা এও বলেছেন, রোববার (১০ ডিসেম্বর) থেকে আকাশ পুরোদমে মেঘমুক্ত হলেও তাপমাত্রা কমতে থাকবে এবং শীত বাড়বে। এ মাসের শেষ নাগাদ দেশজুড়ে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
বুধবার থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। গতকাল শুক্রবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করে মেঘের আড়ালে একটু করে আলোর ঝলক দেখা গেলেও তার স্থায়িত্ব ছিল কম। খানিক বাদেই আবার মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির আনাগোনা।
আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, সারাদেশে শুক্রবারও বৃষ্টির ধারা বর্ষণের পর শনিবার থেকে বৃষ্টি কমে আসবে। রোববার থেকে মেঘ কেটে মুখ দেখাবে সূর্য। তখন রোদ থাকলেও শুরু হবে শীতের প্রভাব। এ সময় তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি কমে যাবে। তারপর বৃষ্টির সম্ভাবনা আপাতত নেই। তাপমাত্রা ক্রমেই কমতে কমতে একপর্যায়ে শীত জেঁকে বসবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে আকাশে যে সঞ্চারণশীল মেঘের সৃষ্টি হয়েছিল তারই প্রভাবে এই বৃষ্টির সূচনা। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে প্রচুর বৃষ্টি হয়। এবার বাংলাদেশে এই দুই মাসে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল তুলনামূলক কম। অক্টোবর-নভেম্বরের বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অক্টোবরে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৫ দশমিক এক শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। নভেম্বরে চার বিভাগে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় সার্বিকভাবে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৫ দশমিক আট শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, এবার শীত খানিকটা দেরিতে আসার কারণ হিসেবেও শক্তিশালী মিগজাউমকে দায়ী করছেন আবহাওয়াবিদেরা। তাঁদের মতে, ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবেই আবহাওয়ায় শীতের প্রভাব কম পড়েছে। এখন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমতে কমতে শেষ হয়ে যাবে এবং প্রবল হয়ে উঠবে শীত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শেষ দিকে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর থেকে ক্রমান্বয়ে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। তাপমাত্রা কমতে কমতে চলতি মাসে একবার অথবা দুবার দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যেতে পারে। এটি ডিসেম্বরের শেষ ভাগে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
উল্লেখ্য, ‘মিগজাউম’ নামটি মায়ানমারের দেওয়া। এটি একটি বর্মি শব্দ। ২৯ নভেম্বর দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছিল। সেটি ক্রমেই ঘনীভূত হয়ে ২ ডিসেম্বর নিম্ন চাপে এবং পরের দিন ৩ ডিসেম্বর গভীর নিম্ন চাপে রূপ নিয়ে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় ধেয়ে আসে। রূপ নেয় মিগজাউম নামের ঘূর্ণিঝড়ে।