মানুষ কেন কাঁদে?

ছবি: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

সুপ্রভাত ডেস্ক  »

কান্না মানুষের জীবনের এক অপরিহার্য অভিজ্ঞতা। ক্লেয়ার ডেনস, কিম কার্দাশিয়ান কিংবা মাইকেল জর্ডান সবাই এই কাজটি করেন। হতে পারে আপনি বহুদিন আগে শেষবার কেঁদেছিলেন। কিন্তু বিরতি যত দীর্ঘই হোক না কেন, সন্দেহ নেই জীবনে কখনো না কখনো আপনিও চোখের পানি ফেলেছেন।

অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীও কান্না করে। তবে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, মানুষই একমাত্র প্রজাতি যারা শুধু চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখা এবং চোখের মনির সুরক্ষার জন্য নয়; বরং আবেগ প্রকাশের জন্যও নিয়মিত কাঁদে- যেমন ব্রেকআপের পরে, স্নাতক অনুষ্ঠানে এবং সিনেমা দেখার সময়।

যদিও আবেগজনিত কান্না আমাদের মানবিক পরিচয়ের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য, তবে নানা দিক থেকে এটি এখনও একটি রহস্যই রয়ে গেছে।

গবেষণায় জানা গেছে, স্নায়ুবিজ্ঞানীরা আগে যেমনটা ভাবতেন, আমাদের আবেগ তার চেয়েও জটিল। উদাহরণস্বরূপ- মস্তিষ্কের এমন কোনো অংশ নেই যা দুঃখ বা রাগের অনুভূতির জন্য দায়ী এবং কাঁদার সময় মস্তিষ্কে কী ঘটে তা দেখতে এখনও মানুষের মস্তিষ্ক স্ক্যান করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা।

তবে, মানুষের অশ্রু সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। যেমন—এটি কীভাবে তৈরি হয়, কেন আমরা এটি উৎপন্ন করি (কিছু মানুষ অন্যদের চেয়ে বেশি), এবং চোখের পানি ফেলার মধ্য দিয়ে কেন আমরা ভালো অনুভব করি।

অশ্রু ৩ ধরনের

চোখের মনি আছে এমন যে কোনো প্রাণীর চোখেই দুই ধরনের অশ্রু তৈরি হয়: বেসাল এবং রিফ্লেক্স। বেসাল অশ্রু চোখকে আর্দ্র রাখে এবং চোখে কোনো বহিরাগত বস্তু (যেমন ধুলা বা ধোঁয়া) ঢুকলে রিফ্লেক্স অশ্রু উৎপন্ন হয়। এটি চোখকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে, অর্থাৎ এটি চোখের মধ্যে কোনো ক্ষতিকর উপাদান প্রবেশ করলে তা ধুয়ে ফেলতে বা বের করে দিতে সহায়ক।

সুতরাং, বেসাল অশ্রু চোখের সুরক্ষার জন্য, আর রিফ্লেক্স অশ্রু চোখকে ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিপদে পড়লে মা-বাবাকে সতর্ক করার জন্য প্রাণীর বাচ্চারাও কান্নাকাটি করে।

তবে মানুষের চোখ থেকে একটি তৃতীয় ধরনের অশ্রু নির্গত হয়, সাধারণত একে ‘আবেগজনিত অশ্রু’ বলা হয়। মানুষ যখন দুঃখিত, হতাশ, অতিরিক্ত চাপ অনুভব করে, সুখী হয় অথবা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে; তখনই এটি নির্গত হয়।

হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের চক্ষুবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডারলিন ডার্ট বলেন, তিন ধরনের অশ্রুই কাঠামোগতভাবে একই রকম। কারণ এগুলো মূলত পানি, তেল, শ্লেষ্মা, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোটিন ও ইলেক্ট্রোলাইট দিয়ে তৈরি।

আমরা হয়ত কখনোই বেসাল অশ্রু দেখতে পাই না, কারণ এটি সারাদিন খুব অল্প পরিমাণে নির্গত হয়। এই অশ্রু যখন বাষ্পীভূত হয়ে যায়, তখন চোখের পাতার তাপমাত্রা সামান্য কমে যায় এবং এটি একটি সংকেত দেয় যে চোখের আরও বেসাল অশ্রু উৎপন্ন করা উচিত, যাতে চোখ শুষ্ক না হয়ে যায়।

তবে রিফ্লেক্স এবং আবেগজনিত অশ্রু বেশি পরিমাণে নির্গত হয়। এজন্যই পেঁয়াজ কাটতে গেলে আমাদের চোখে পানি চলে আসে বা শোকাবহ মুহূর্তে (যেমন: কারও মৃত্যুর খবর শুনে) অশ্রু ঝরে পড়ে।

অতিরিক্ত এই অশ্রু মূলত বিশেষ ধরনের অশ্রু গ্রন্থি থেকে নির্গত হয়, এগুলোর অবস্থান ভ্রুর নিচে এবং এগুলো ব্রেনস্টেমের কোষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

রিফ্লেক্স অশ্রুর ক্ষেত্রে চোখের নার্ভগুলো ব্রেনস্টেমকে সংকেত দেয় যে চোখে কিছু ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশ করেছে, সেগুলো ধুয়ে ফেলার জন্য অশ্রু প্রয়োজন।

আবেগজনিত অশ্রুর ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা মনে করেন ব্রেনের অন্যান্য অংশগুলো সেই ব্রেনস্টেমগুলোকে সক্রিয় করে অশ্রু গ্রন্থিগুলোকে সক্রিয় করে।

আমরা কেন চোখের পানি বা অশ্রু বিসর্জন করি

অনেক প্রাণী দুঃখে চিৎকার করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানুষ এবং এসব প্রাণী শৈশবকালে টিকে থাকার একটি উপায় হিসেবে কান্না করে থাকে। কারণ যেসব প্রাণী কণ্ঠ দিয়ে চিৎকার করে, তারা সাধারণত মায়ের বা বাবার উপর নির্ভর করে। যেমন: স্তন্যপায়ী ও পাখি।

অর্থাৎ. পাখির ছানার কিচিরমিচির ডাক বা একটি ছাগল ছানার ম্যা ম্যা ডাক হলো তার প্রধান হাতিয়ার, যা দিয়ে সে অভিভাবককে নিজের ক্ষুধা, ভয় বা ব্যথা পাওয়ার কথা জানিয়ে যত্ন চাইতে পারে।

কিন্তু প্রাণীরা যখন কাঁদে, তখন তারা অনুভূতিজনিত অশ্রু ফেলে না এবং জন্মের পরের প্রথম কয়েক সপ্তাহে মানব শিশুও কাঁদে, কিন্তু অশ্রু ফেলে না।

প্রথমে অন্য প্রাণীর মতো নবজাতক শিশুও অশ্রুবিহীন তবে হৃদয়বিদারক (এবং কানফাটানো) আওয়াজে কাঁদে। তারপর, প্রথম এক বা দুই মাস পর তাদের চোখ থেকে নোনা তরল পড়া শুরু হয়। অর্থাৎ, মানব শিশু তার জীবনের প্রথম কয়েক সপ্তাহ অশ্রু ফেলতে পারে না।

এই বিষয়টি বেশ কিছুটা রহস্যময় যে কেন ও কীভাবে আমরা দুঃখিত হলে অশ্রু ফেলা শুরু করেছি। শ্লথ বা বাদুড়রা চোখ শুকনো রেখেই চিৎকার করে, আমরা কেন তাদের মতো চোখ শুকনো রেখে কাঁদি না।

নেদারল্যান্ডের টিলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের একজন ইমিরেটাস অধ্যাপক এবং মানবিক কান্না নিয়ে সর্বপ্রথম গবেষণা করা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম আদ ভিঙ্গারহোটস বলেন, ‘হতে পারে আমরা যখন মুখ শক্ত করে বিকৃত করি এবং কান্না করার জন্য গলা থেকে শব্দ বের করি, তখন এটি চোখের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা অশ্রু গ্রন্থিগুলোকে উদ্দীপিত করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ কারণে হাই তোলা, অট্টহাসি এবং বমি করার সময়ও কখনো কখনো চোখ দিয়ে অশ্রু বের হয়।’

পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রি এবং সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লরেন বাইলসমা বলেছেন, ‘চিৎকারের তুলনায় বিবর্তনের ক্ষেত্রে অশ্রু সম্ভবত বেশি সুবিধা দেয় এবং আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নীরবে [আওয়াজ না করে] কান্না করতে সক্ষম হই। যেমন: বিমান যাত্রায় একজন শিশু যদি চিৎকার করে, তবে সেটা সবাই শুনতে পায়; কিন্তু আপনি যখন সিনেমা দেখে কাঁদেন, তখন আপনার চোখে অশ্রু গড়িয়ে পড়া শুধু আশেপাশের মানুষই দেখতে পাবে।

এভাবে, অশ্রু আশেপাশে থাকা অন্যদের আরও সূক্ষ্মভাবে সংকেত দিতে পারে যে কেউ বিপদে আছে, তবে এতে কোনো আওয়াজ না হওয়ায় আশেপাশে ওৎ পেতে থাকা শিকারিরা সেই ব্যক্তির সন্ধান পায় না।

আমাদের কান্নার কারণ বয়স বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়

আমাদের জীবনের প্রথম কয়েক বছর, আমরা মূলত আমাদের নিজের সঙ্গে ঘটা বিভিন্ন কারণে অশ্রু ফেলি যেমন: আঘাত পাওয়া, মৌমাছির কামড় বা আইসক্রিম হাত থেকে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি।

আমরা যত বড় হতে থাকি এটি পরিবর্তিত হতে থাকে এবং আমাদের আবেগিক ও সামাজিক বিকাশ ঘটে। যেমন: শারীরিক ব্যথার প্রতিক্রিয়ায় আমরা কম কান্না করি, তবে অন্য মানুষের সঙ্গে আমাদের আবেগিক সম্পর্কের কারণে বেশি কান্না করি।

ড. ভিঙ্গারহোটস বলেছেন, ‘আপনার দুনিয়া বড় হতে থাকে, ফলে আরও অনেক মানুষ আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।’

কান্নার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো প্রিয়জনের অভাব বা হারানো। যে কোনো বয়সে কারো মৃত্যু শোকে মানুষের মন কাঁদে।

অনেক সময় আমরা অন্যদের দুঃখেও কান্না করি। এই সহানুভূতিশীল অশ্রু আমাদের নিজের অবস্থান অন্য মানুষের জায়গায় কল্পনা করার কারণে হতে পারে, সে যে কেউ হতে পারে-বন্ধু, অপরিচিত ব্যক্তি বা এমনকি কাল্পনিক চরিত্র।

বিজ্ঞানীরা কান্না অধ্যয়ন করতে মূলত এভাবেই কাজ করেন: তারা মানুষের সামনে একটি দুঃখজনক সিনেমার ক্লিপ দেখান এবং দেখেন এতে তাদের চোখের পানি বের হয় কি না।

বিজ্ঞানীরা ‘দ্য চ্যাম্প’, ‘বিচেস’ এবং ‘এটোনমেন্ট’ সিনেমাগুলোকে গবেষণার অংশ হিসেবে দেখাতে পছন্দ করেন, যাতে তারা মানুষকে কাঁদাতে পারেন।

যদিও দুঃখের অনুভূতি কান্নার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তবে বেশিরভাগ অশ্রুশিক্ত অভিজ্ঞতার কারণ হলো অসহায়ত্ব বা শক্তিহীনতার অনুভূতি। হতাশার কান্নার পেছনে শক্তিহীনতার এই অনুভূতি থাকে এবং আনন্দ, উদ্বেগ বা বিস্ময়ের কারণে আবেগীয়ভাবে অভিভূত বোধ করার সময় কিছু মানুষ যে অশ্রু ফেলে তা-ও ব্যাখ্যা করতে পারে এটি।

ড. ভিঙ্গারহোটস অসহায়ত্বকে ‘কান্নার মূল উপাদান’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, কারণ এটি অশ্রুর বিবর্তনমূলক মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাখ্যা করে: সহায়তা বা সমর্থন প্রয়োজন হওয়া।

কেন কিছু মানুষ অন্যদের চেয়ে বেশি কাঁদে

শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, একজন মানুষ কতবার কান্না করে, মূলত তা তার লিঙ্গের ওপর নির্ভর করে।

বিশ্বজুড়ে গবেষণায় দেখা গেছে যে নারীরা গড়ে পুরুষদের তুলনায় বেশি কাঁদেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পার্থক্যের বেশিরভাগই সামাজিক চাপ এবং লিঙ্গভিত্তিক নিয়মনীতির ফলস্বরূপ হতে পারে।

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক জোনাথন রটেনবার্গ বলেন, ‘ছোট ছেলেমেয়েরা প্রায় একই পরিমাণে কান্না করে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এক পর্যায়ে কান্নার লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য দেখা দেয়। এর একটি কারণ হতে পারে, সমাজ সাধারণত ছেলেদের শেখায় যে তাদের কঠিন ও দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন মানুষ হতে হবে। এ কারণে ছেলেরা কাঁদতে বা আবেগ প্রকাশ করতে কম অভ্যস্ত হয়।’

ড. রটেনবার্গ বলেছেন, ‘ছেলেরা তাদের কান্নাকে অবদমিত করে রাখে, কারণ তারা লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে চিরাচরিত ধারণার বাইরে যেতে ভয় পায়।’

অর্থাৎ, সমাজে ছেলেদের প্রতি যে প্রত্যাশা রয়েছে, তার মধ্যে কান্না প্রকাশ করা কম গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখা হয়। তাই নিজেদের ‘পুরুষালি’ হিসেবে দেখানোর জন্য ছেলেরা তাদের আবেগকে চাপা দিয়ে রাখে।

গবেষণা থেকে জানা গেছে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় প্রায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি কান্না করেন।

এক্ষেত্রে হরমোনও ভূমিকা পালন করতে পারে। সাধারণত, কৈশোরকালে যখন যৌন হরমোন সক্রিয় হতে শুরু করে, তখন কান্নার লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য তৈরি হতে দেখা যায়।

একটি ধারণা হলো, টেস্টোস্টেরন হরমোন কান্নাকে দমন করতে পারে, আর এস্ট্রোজেন হরমোনের ওঠানামা মানুষকে আরও কান্নাপ্রবণ করতে পারে।

তবে এই বিষয়ে খুব কম গবেষণা হয়েছে।

হরমোন এবং কান্নার সম্পর্ক নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম নিয়ে যদিও প্রচলিত ধারণা যে নারীরা মাসিক চক্রের আগে [বিশেষ করে ঋতুস্রাবের আগের দিনগুলোতে] আবেগপ্রবণ হয়ে বেশি কান্না করেন। তবে এই ধারণাটি ঠিক নয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা তাদের মাসিক চক্রের কোনো নির্দিষ্ট পর্যায়ে [ঋতুস্রাবের আগে] বেশি কান্না করেন না। অর্থাৎ, মাসিক চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে কান্নার প্রবণতা এবং আবেগের ওঠানামা সম্পর্কে এই প্রচলিত ধারণা আসলে সঠিক নয়।

ড. ভিঙ্গারহোয়েটস বলেন, ব্যক্তিত্বের কিছু বৈশিষ্ট্যও মানুষ কতটা কাঁদে তাতে প্রভাব ফেলে বলে ধারণা করা হয়। খুব সহানুভূতিশীল মানুষরা সাধারণত বেশি কান্না করেন, তেমনি বাতিকগ্রস্থ মানুষেরাও বেশি কান্না করেন।

এছাড়া, আমরা এমন কিছু কাজ করি, যেগুলো আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলে এবং কান্নার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। যেমন: মদ্যপান করা এবং ঘুমকে অবহেলা করা।

এই দুটি বিষয়ের যেকোনো একটি করার ফলে মানুষ সহজেই কান্নাপ্রবণ হয়ে পড়তে পারে। এর কারণ হতে পারে এই কাজগুলোর ফলে তাদের আবেগ প্রশমন ক্ষমতা কমে যায়, ফলে কান্না থামানো কঠিন হয়ে পড়ে।

কান্নার উপকারিতা

সম্ভবত গবেষকদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘতম বিতর্কটি হলো, কেন প্রায়ই কান্না করার পর মানুষ ভাল বোধ করে।

বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে করা একটি বৃহত্তম গবেষণায় জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা শেষবার কবে কান্না করেছিলেন এবং তার পর কী অনুভব করেছিলেন?

এই গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ শতাংশের একটু বেশি অংশ বলেছেন যে কান্নার পর তারা ভালো অনুভব করেছেন, প্রায় ৪০ শতাংশের কোনো পার্থক্য অনুভূত হয়নি এবং ১০ শতাংশ মানুষ বলেছেন যে, তারা কান্নার পর আসলে আরও খারাপ অনুভব করেছেন।

কান্না; বিশেষ করে যখন কেউ একা থাকে, তখন এটি এক ধরনের সেলফ-থেরাপির মতো কাজ করতে পারে।

ড. বাইলসমা বলেছেন, ‘কান্না আপনাকে যেই বিষয়ে কাঁদছেন তা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। এটি কগনিটিভভাবে (বৌদ্ধিক), আবেগগতভাবে এবং যেটি আপনাকে বিপর্যস্ত করছে, সেই বিষয়টি গ্রহণ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।’

ড. ভিঙ্গারহোয়েটস বলেন, ‘যদি কান্নার কারণ এমন কোনো বিষয় হয়, যা সমাধান করা সম্ভব, তাহলে মানুষ সাধারণত কাঁদার পর ভালো অনুভব করেন। যেমন: সঙ্গীর সাথে মতভেদ। কিন্তু যদি কান্নার কারণ এমন কোনো কারণ হয়, যা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তাহলে তারা কান্নার পর অধিকাংশ সময় ভালো অনুভব করেন না। যেমন: প্রিয়জনের মৃত্যু।’

এছাড়া, বয়স বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানুষ শারীরিক বা মানসিক যন্ত্রণার কারণে কম কান্না করে।

সামাজিক পরিস্থিতিতে; কান্নার পর আপনার অনুভূতি কেমন হবে, সেটা সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে আশেপাশের মানুষের প্রতিক্রিয়ার ওপর। এ পরিস্থিতিতে কান্নার পর যারা সহানুভূতিশীল প্রতিক্রিয়া পান, যেমন একটি আলিঙ্গন বা তাদের অনুভূতির সমর্থন, তারা সাধারণত ভালো অনুভব করেন। কিন্তু যারা কান্নার প্রতিক্রিয়ায় রাগ বা তাচ্ছিল্য পান, তারা আরও বেশি খারাপ অনুভব করেন।

এটি যথার্থ মনে হয়, কারণ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন আপনার বয়স যা-ই হোক না কেন, কান্নার প্রধান উদ্দেশ্য হলো অন্যদের কাছে দুঃখ বা কষ্টের কথা জানানো।

ড. রটেনবার্গ বলেছেন, যখন সাহায্যের প্রয়োজন, কেউ বিচ্ছিন্ন বোধ করে এবং যত্ন পাচ্ছে না বলে বোধ করে, তখনই অন্যকে সংকেত দেওয়ার জন্য কান্না করা হয়।

এর থেকে আমরা শিখলাম: যখন কেউ আপনার সামনে কান্না করে, তখন তাকে জানান যে আপনি তার পাশে আছেন।

বিজ্ঞান বলছে, এটি সত্যিই সাহায্য করে।

সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস