বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া :
মানিক মিঞা। গ্রামের বাড়ি-চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ বাণীগ্রামে। ছোট বেলা থেকে অন্য দশজনের মত তার স্বপ্ন ছিল পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করা। সেই স্বপ্ন নিয়ে কিছুদিনের জন্য বিদেশেও পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু বিদেশে অসুস্থ হয়ে পুনরায় দেশে ফিরে আসেন। দীর্ঘ দুই বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে মানিকের স্বপ্ন এখন শিকলেবন্দী।
দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা ৩ ভাই, ৩ বোনের মধ্যে একই পরিবারে ৫ জন মানসিক ভারসাম্যহীন। অভাবের সংসারে বর্তমানে তাদের পরিবারটি মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাড়ির উঠানে খোলা আকাশের নিচে একটি গাছের গোড়ায় লোহার শিকল দিয়ে মনির আহমদের আদরের সন্তান মানিককে বেঁধে রাখা হয়েছে। রৌদ, বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে উপরে কিছু পলিথিন দিলেও তা ছিঁড়ে গেছে। যার কারণে এখন খোলা আকাশের নিচে রয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের বাণীগ্রাম এলাকার দরিদ্র কৃষক মনির আহমদ নিজেই এখন মানসিক চাপে ভারসাম্যহীন। শিকলেবন্দী পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান মানিক কিছুদিন প্রবাসে থাকলেও সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে পুনরায় দেশে ফিরে আসেন। এরপর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে আর্থিক সমস্যার কারণে আর চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরিবারের সদস্য ও বাড়ির লোকজনকে মারধর ও গালিগালাজ করার কারণে মানিককে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। মা খতিজা বেগম সন্তানকে খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ করে যাচ্ছেন। একই পরিবারের সন্তান নবী হোসেন, মানিক মিঞা, কন্যা শাকী আকতার, লাকী আকতার ও পিতা মনির আহমদ এখন ভারসাম্যহীন। ৮ সদস্যের এই পরিবারে দুর্দশায় চলছে।
মানিকের মা খতিজা বেগম জানিয়েছেন, স্বামীসহ তাদের পরিবারে বর্তমানে ৫জন ভারসাম্যহীন সদস্য রয়েছে। খুব কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছে। দ্বিতীয় সন্তান মানিক মিঞাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। বড় সন্তান নবী হোসেন ঘরে রয়েছে। তাদের পরিবারে আর্থিক সমস্যায় রয়েছে। সরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামীসহ ৫ জনকে চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।
স্থানীয় কোলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহমদ নূর জানিয়েছেন, তাদের এলাকায় বেশকিছু প্রতিবন্ধী রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের সরকারিভাবে বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে। একইভাবে বাণীগ্রাম এলাকার অসহায় মানিকের পরিবারকেও সহযোগিতা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্যও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। একই পরিবারের ৫ জন মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় নানা সমস্যা হচ্ছে। এলাকার বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে চিকিৎসা সম্ভব।