মাতৃভাষা ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত

আহমেদ টিকু »

ছোট্ট বন্ধুরা তোমরা কি জানো, আমাদের দেশে জন্মেছিলেন মধুসূদন দত্ত নামে একজন কবি। তখন দেশে চলছিল ব্রিটিশ শাসন। রাজভাষা ছিল ইংরেজি। লেখাপড়া, অফিসিয়াল কাজকর্ম সবই চলত ইংরেজি ভাষাতেই। শুধু কি তাই, সে সময় বিশ্বে জয়জয়াকার চলছিল ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের। কবিও প্রেমে পড়লেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের । তিনি হতে চাইলেন ইংরেজি ভাষার বড় কবি। লক্ষ্য সফল করতে হলে যেতে হবে বিলেত। বিলেত গমন সহজ হবে ভেবে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলেন। তার নামের প্রথমে যুক্ত হল মাইকেল। শুনে রাগন্বিত হলেন যশোরের জমিদার পিতা রাজনারায়ণ দত্ত। ত্যাজ্য ঘোষণা করা হলো তাকে। কিছুতেই টলানো গেল না মধুসূদনকে। তিনি তার সিদ্ধান্তে অনড়। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করায় তাকে হিন্দু কলেজ থেকে বিতাড়িত করা হয়। পিতা অর্থ প্রেরণ বন্ধ করে দেন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে তিনি জীবিকার সন্ধানে ১৯৪৮ সালে মাদ্রাজ চলে যান। সেখানেই রচনা করেন ‘ক্যাপটিভ লেডি’ ও ‘ভিশনস অব দ্য পাস্ট’ নামের দুটি বই। সাহিত্যকর্ম দিয়ে তিনি ইংরেজদের দৃষ্টি কাড়তে পারলেন না। কবিও ইংরেজিতে লিখে অতটা সুখবোধ করছিলেন না। মাতৃভাষা ও ভিনদেশী ভাষা কখনই এক হতে পারে না। মাতৃভাষাই তো মনের ভাব প্রকাশের অকপট মাধ্যম । কবি তা টের পেলেন হাড়ে-হাড়ে। অবশেষে কবি ফিরলেন। ১৮৫৬ সালে বন্ধুদের অনুরোধে শূন্য হাতে কবি কলকাতায় ফিরলেন। লিখতে শুরু করলেন নিজ ভাষায়। যে ভাষায় তিনি শিশুকালে মায়ের কোলে শুয়ে শুনেছেন মহাভারতের কাহিনী, রুপকথার গল্প। এ ভাষাতো তার প্রাণে, মনে, দেহে মিশে আছে। মিশে আছে তার অস্তিত্বে, তাঁর সত্ত্বায়। তিনি লিখলেন, লিখলেন মনের সুখে। প্রাণ-মন উজাড় করে। লিখেছেন কাব্য, মহাকাব্য, নাটক, প্রহসন আরও কত কী! ১৮৬২ সালে মধুকবি বিলেত গিয়েছিলেন বটে, কিন্তু ইংরেজিতে সাহিত্য রচনার সাধ তাঁর মনে আর ছিল না। বাংলা কবিতায় তিনিই প্রথম অমিত্রাক্ষর নামে একটি ছন্দরীতির প্রবর্তন করেন। তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা রচনা করেন। মাইকেল মধুসূদন আজ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি।