জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকায় বাস্তবায়ন হতে যাওয়া মাতারবাড়ি বন্দর ২০২৫ সালে অপারেশনে আসতে পারে এবং ২০২৪ সালে উৎপাদনে আসবে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের আমদানি রপ্তানির ৯২ শতাংশ পণ্য পরিবাহিত হয়। কিন্তু দেশের অর্থনীতির যে প্রবৃদ্ধি তাতে বিকল্প বন্দরের প্রয়োজন রয়েছে। ইতিমধ্যে ভারতের পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্টের প্রথম চালান চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ত্রিপুরা ও আসামে গিয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে এই সার্ভিস চালু হলেও তা লাভবান হলে ভারত এই রুট ব্যবহার করতে পারে। এতে কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম বন্দর এবং চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে আখাউড়া হয়ে ত্রিপুরায় পণ্য যেতে পারবে।
ইতিমধ্যে প্রকল্প এলাকায় চ্যানেল নির্মাণের কাজ করছে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প। এই প্রকল্পের অধীনে পণ্যবাহী জাহাজ আসার কথা রয়েছে। আর সেই জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনেই প্রবেশ করবে। বর্তমানে চ্যানেলে জেটি নির্মাণের কাজ চলছে। পুরো চ্যানেলের কাজ প্রায় শেষ। এছাড়া কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত চ্যানেলটি বন্দরের অধীনেই পরিচালিত হবে। গভীর সমুদ্র থেকে টাগবোটের মাধ্যমে জাহাজগুলোকে জেটিতে ভেড়ানো হবে। এজন্য শিগগিরই আমরা টাগবোট কেনা হবে।
মাতারবাড়ি যে গতিতে এগুচ্ছে তাতে হয়তো বন্দর প্রস্তুত হয়ে গেলেও এর সাথে যাতায়াত নেটওয়ার্কের জন্য সড়কপথ যথাসময়ে শেষ নাও হতে পারে। এমন আশঙ্কা বিষয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা বলেন, এজন্য আমরা মাতারবাড়ির সাথে চট্টগ্রাম বন্দর, পায়রা ও মোংলা বন্দরের সাথে ফিডার জাহাজ রুট রাখবো। যাতে করে পণ্য সহজে ফিডার জাহাজে করে অন্যান্য বন্দরে নেয়া যায়। এতে সড়ক নেটওয়ার্ক পিছিয়ে থাকলেও দ্রুত পণ্য পরিবাহিত করা যাবে।
বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়িতে নির্মিত কৃত্রিম চ্যানেল (উভয় পাশে মাটি মাঝখান দিয়ে জাহাজ চলাচল করবে) দিয়ে জাহাজ জেটিতে ভিড়তে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য পাড়ি দিতে হবে। ৩৫০ মিটার চওড়া এই চ্যানেলটিতে ১৮ মিটার ড্রাফটের ৩৬৬ মিটার দীর্ঘ জাহাজগুলো ভিড়তে পারবে এবং জেটি এলাকায় ঘুরতেও পারবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ মিটার ড্রাফটের এবং বে টার্মিনালে ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভেড়াতে জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করলেও মাতারবাড়িতে সেই সমস্যা নেই।
১২ মিটার ড্রাফটের বেশি কোনো জাহাজ ভিড়লে তাকে গভীর সমুদ্র বন্দর বলা হয়। সেই হিসেবে মাতারবাড়িতে ১৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশ গভীর সমুদ্র বন্দরের সুবিধা পাবে। প্যানামেক্স (১৩ থেকে ১৪ হাজার কনটেইনার পরিবহন করা জাহাজ) আকারের বড় জাহাজগুলো এখানে ভিড়তে পারবে, বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্দরে ২২০০ থেকে ২৩০০ কনটেইনার নিয়ে জাহাজ ভিড়ে থাকে।
কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রিক এই বন্দর শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেই যে অবদান রাখবে তা নয়, ভবিষ্যতের বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বিশাল ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যতে যোগাযোগ ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো ঘটবে সেখানে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কাজেই আমরা আশা করব নির্দিষ্ট সময়ে বন্দর ও বন্দরমুখি যোগাযোগ ব্যবস্থার কাজ শেষ করতে কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য সবকিছু করবে।
মতামত