হাই নিউটন
হাই স্যার আইজাক নিউটন, তুমি কই!
ট্রিনিটিতে বসে আছি আমি তোমার আপেল গাছের নিচে।
জানলা দিয়ে দেখা যায় ‘প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা’ – তোমার বই,
আজ আবারও বলি, হয়তো শোনাতে পারে ক্লিশে।
তুমি বলেছিলে, বস্তু সরল রেখায় চলে ক্রমাগত গতি নিয়ে,
কিন্তু বেঁকে যেতে পারে বলের প্রতিক্রিয়ায়।
ষাট বছর যাবত দেখছি সারা পৃথিবীটা চলছে এগিয়ে,
কিন্তু ঠিকই বেঁকে যাচ্ছে আমাদের এ-বাংলায়।
জেনেছি প্রত্যেক ক্রিয়ার আছে সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া,
এ-সূত্র বাংলার গ্রামে-গ্রামে বহুকাল ধরে জানা ছিল।
আজও সর্বত্র ঘটেই চলেছে এ-সূত্রেরই মিথস্ক্রিয়া,
পাটকেলটি খেতে হবেই ছোঁড়ো যদি অতি ক্ষুদ্র একটি ঢিলও।
আমরা সকলেই জানি বস্তুত এ-ভবে,
বিজ্ঞান দিয়েই বিশ্ব হয়েছে উর্ধ্বগামী।
আপেল নিচের দিকেই পড়ে, পড়তে তাকে হবেই হবে,
যদিও উর্ধ্বে আসীন থাকেন বিশ্বাসীদের অন্তর্যামী।
যত আপেল নিচের দিকে পড়ে সব আসে ওপর থেকে,
এবং অসীম ধৈর্য্যে কাল কাটায় মানুষ ওপরের দিকে চেয়ে।
কিছু পড়ে সোজাসাপ্টা কিছু হাওয়ার ঝাপ্টায় যায় বেঁকে,
কেউ খেতে পারে আর কেউবা আহত হয় মাথায় আঘাত পেয়ে।
সাইবেরিয়ায় যাওয়ার প্রাক্কালে সোলঝেনিৎসিন
শুনুন স্তালিন, আমার ওপর ঝাড়ুন না রাগ,
একদিন আপনি থাকবেননা, আমারও ফুরিয়ে যাবে দিন।
কিন্তু আমি গেঁথে রেখে যাবো শব্দে আপনার গুলাগ,
মানুষ বলবে হ্যাঁ, সত্য বলে গেছে সোলঝেনিৎসিন।
সকল সাম্যের নামে করেছেন সবাইকে মিডজেট,
যাতে তারা হাত বাড়াতে না পারে স্বপ্নের দিকে।
আপনাকে ঘিরে আছে সব লাল-রং সাইকোফ্যান্ট,
একদিন তারাই করবে আপনার গৌরবকে ফিকে।
দস্তয়েভস্কি যে ঘা-ক্ষত দেখান তার ঔষধ দিন,
ডাক্তারকেই আপনি পাঠিয়ে দিচ্ছেন সাইবেরিয়ায়।
অসুখ হয় নি, বলেই যাচ্ছেন জনাব স্তালিন,
খালি হাতে কী পুঁজির দানো’র সঙ্গে লড়া যায়।
প্রতিভাহীনেরা আপনার খুশিতে দেবে হাততালি,
চেয়ারে বসে আপনি ধীশক্তিমানদের করবেন গালাগালি
রোমন্থন
অনেক ঘুরেছি আমি ব্রিকলেনে হোয়াইটচ্যাপেলে,
কে যে গায় ‘মন মজাইয়া’ এই ভোরের বেলা!
সে-করুণ সুর বুকে নিয়ে হাঁটি আমিই একেলা,
বাংলার রান্নার ধোঁয়া উড়ে যায় বিলেতি বিকেলে।
টয়েনবি হল শ্বেতাঙ্গ র্যাপার স্পন্দনে কাঁপায়,
কোন্ গৃহকোণে অচেনা রাঁধুনি ছড়ায় সুঘ্রাণ।
ফতেহ্ আলীর কাওয়ালি কে গায় উত্তীর্ণ সন্ধ্যায়,
এই বিভুঁইয়ে আজও রয়ে যায় শেকড়ের টান।
এখানে প্রবীণ হাঁটে গায়ে দিয়ে কুমিল্লা খদ্দর,
হাতে গেঁথে বসা কলোনি-স্বাক্ষর জাহাজের কড়া।
সে-জাহাজ স্ক্র্যাপ হয়ে চলে গেছে দূরের বন্দর,
জাহাজির নাতি পাঠ করে চলে ইংলিশ ছড়া।
প্রবীণের চোখে ভাসে, গিয়েছিল শ্রীহট্ট-মেলায়,
সে-স্মৃতির চলে রোমন্থন এই পড়ন্ত বেলায়।
সাংগ্রাই-সঙ্গমে
জলের উৎসবে মিলেছি আমরা সাংগ্রাই-সঙ্গমে,
চৈত্রের দাবদাহ মেঘ হয়ে ওড়ে মাটিতে ফাটল।
তপ্ত চতুর্দিক টগবগ ফোটে স্থাবর-জঙ্গমে,
আমরা দু’জনে মাখবো অবারিত শুশ্রূষার জল।
মারমা তরুণেরা আবেগে-উচ্ছ্বাসে ভরে জলসত্র,
চোখ থেকে আলো ছোটে তীর হয়ে আরাধ্য উদ্দেশে।
বনে পাখি ডাকে, ডাকে লোকালয়ে, ডাকে যত্রতত্র,
উত্তরে মেয়েরাও দেয় পাল্টা জল আনন্দে ও শ্লেষে।
এসো সখি তুমি দাঁড়াও এ বেলা কদমতলাটাতে,
তোমাকে যে আমি ভিজিয়েছি ঢের সুপ্রাচীন বর্ষে।
সাংগ্রাইয়ের ডাকে সাড়া দেবো ঠিক প্রেমের প্রপাতে,
হও অরণ্যের মেয়ে আমিও জাগি অনিঃশেষ হর্ষে!