ডেস্ক রিপোর্ট »
১৩ জুন মধ্যরাতে বিএনপিতে ব্যাপক রদবদল। নয়টি কমিটি বিলুপ্ত। হয়েছে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি। এসব পুনর্বিন্যাসকে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন অনেকে। সরকার পতন আন্দোলনে ব্যর্থতার পেছনে নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তাই এর নেপথ্য কারণ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। তবে এ রদবদল যোগ্যদের মূল্যায়নের পাশাপাশি আগামী আন্দোলন-কর্মসূচিতে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে মত বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের।
নিষ্ক্রিয়, ব্যর্থ ও প্রবীণদের সরিয়ে তরুণদের দলের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। যার অংশ হিসেবে আন্দোলন থেকে পালিয়ে থাকা নেতাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে আন্দোলনে ভূমিকা রাখা নেতাদের দেওয়া হচ্ছে ‘উপহার’।
নির্বাচন কমিশনের আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় ২০২৫ সালে সীমিত পরিসরে হলেও দলের কাউন্সিল করতে চায় বিএনপি। সে জন্য সারা দেশে কমিটি করে কাউন্সিলর তালিকার কাজ দ্রুত শুরু করতে চায় দেড় দশকের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি।
ইতোমধ্যে ডাকসাইটের পাঁচ যুগ্ম মহাসচিবকে পাঠানো হয়েছে উপদেষ্টা কাউন্সিলে। আবার দীর্ঘদিন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে না থেকেও কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি।
চট্টগ্রাম থেকে নতুনভাবে কেন্দ্রীয় কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগের সহ সাংগঠনিক সম্পদক পদে জায়গা করে নিয়েছেন সাবেক মেয়র মীর নাছিরের ছেলে ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
এছাড়া ১৮ সদস্যের স্পেশাল অ্যাসিটেন্ট টু দ্যা চেয়ারপার্সন ফরেন অ্যাফায়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটতে রাখা হয়েছে মীর নাছির পুত্র মীর হেলালকে। এই কমিটিতে আরো আছেন বিএনপি নেতা আমীর খসরুর সন্তান ইসরাফিল খসরু।
১১ সদস্যের চেয়ারপার্সন ফরেন অ্যাফায়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটতে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে আছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
১৩ জুন ভেঙে দেওয়া হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটি।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করায় তৃণমুলে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদাত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের নগর কমিটি করা হয়। তখন তিন মাসের মধ্যে তৃণমূলের সম্মেলন শেষ করে নগর কমিটি গঠন করতে বলা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কমিটি আর হয়নি।
ডা. শাহাদাত হোসেন আর আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বে বিগত দিনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি ঐক্যবদ্ধ ছিল। এক সময় নগর বিএনপিতে ‘যত নেতা, তত গ্রুপে’র যে বদনাম ছিল তা এখন নেই। দলীয় ঐক্য অটুট রেখেই দায়িত্ব পালন করেছেন আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। এরপরও কোন কোন নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের গুডবুক থেকে সরে গেছেন বলে জানা গেছে।
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নগরীর নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে একটি পক্ষ তৎপর হয়েছেন। তাদের তৎপরতা সফল হলে সামনে যে কমিটি হবে তাতে নতুন মুখ আসতে পারে, আবার বাদ পড়তে পারেন বিলুপ্ত কমিটির অনেকে।
নতুন কমিটিতে আসতে নেতাদের অনেকে তোড়জোর শুরু করে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে তাদের অনুসারিদের ভাল পদে বসাতে তৎপর হয়ে উঠবেন বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা।
নতুন নেতৃত্বের আলোচনায় আছেন সভাপতি পদে বিলুপ্ত মহানগর কমিটির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও বিলুপ্ত কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, যিনি ২০০৮ সালে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে চান্দগাঁও- বোয়ালখালি আসন থেকে নির্বাচন করেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম, ছাত্রদল মহানগরের সাবেক সভাপতি নাজিমুর রহমান, বিলুপ্ত কমিটির সদস্য আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল এবং নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তি।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দ্রুততম সময়ে নতুন কমিটি চান। তারা মনে করেন কমিটি গঠনে দেরি হলে নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের মনোবল ভেঙ্গে যেতে পারে। পদ-পদবি নিয়ে কলহ বিরোধও দেখা দিতে পারে। আওয়ামী লীগের মত দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার জন্য যোগ্য এবং কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব তৃণমূলের নেতাকর্মীরা প্রত্যাশা করেন।