মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের পদক্ষেপ চাই

মশার জীবনচক্র অনুযায়ী, লার্ভা থেকে পিউপা হয়ে পরিপূর্ণ মশায় রূপ নিতে সময় লাগে আট থেকে ১০ দিন। এসময় কীটনাশক স্প্রে করতে না পারলে মশার উপদ্রব বেড়ে যায় ।
মশক নিধনে নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে দৈনিক ২০ লিটার করে কীটনাশক স্প্রে করলে বছরে প্রয়োজন ৩ লাখ লিটার। বিপরীতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) প্রতি বছর গড়ে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার লিটার কীটনাশক সংগ্রহ করে। ফলে প্রতিদিন পরিপূর্ণভাবে মশক নিধনে কীটনাশক স্প্রে করা সম্ভব হয় না। এদিকে যেমন পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ‘এডাল্টিসাইড’ সংকট থাকায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্প্রে বন্ধ রয়েছে। ফলে সম্প্রতি শহরজুড়ে বেড়েছে মশার উৎপাত। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নগরবাসী।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এখন শহরে যে মশার উপদ্রব বেড়েছে তা কিউলেক্স মশা। এ মশার জন্ম হয় শুষ্ক মৌসুমে। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এর প্রকোপ বেশি থাকে। এরপর বর্ষা শুরু হলে বাড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ। আবার তাপমাত্রা বাড়লে বৃদ্ধি পায় কিউলেক্স মশার উপদ্রব। সাধারণত তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে কিউলেক্সের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। এখন চৈত্র মাস। সম্প্রতি তাপমাত্রাও বেড়েছে। ফলে প্রাকৃতিকভাবেও মশার উপদ্রব বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত সময় এখন।
এছাড়া কিউলেক্স মশা সাধারণত দূষিত পানিতে জন্মায়। এদিকে শহরের নালা–নর্দমাগুলো ময়লা–আবর্জনায় ভরে আছে; যা কিউলেক্স মশা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। শহরের প্রধান খালগুলো ছাড়াও সেকেন্ডারি ড্রেনগুলোও আবর্জনায় পূর্ণ; যা কিউলেক্স মশার লার্ভা বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। খাল–নালাগুলো ভরাট থাকায় বন্ধ আছে স্বাভাবিক পানি প্রবাহও। অথচ পানি প্রবাহ ঠিক থাকলে খাল হয়ে মশার লার্ভা চলে যায় নদী বা সমুদ্রে। অর্থাৎ তাপমাত্রাজনিত কারণে প্রাকৃতিকভাবে মশার বংশ বিস্তার যেমন হচ্ছে, তেমনি মনুষ্য সৃষ্ট কারণেও খাল–নালা বন্ধ থাকায় বাড়ছে মশার উপদ্রব। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চসিকের মশক নিধন কার্যক্রমের ধীরগতি। সব মিলিয়ে শহরের বেড়েছে মশার উপদ্রব।
জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। কিন্তু জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই।