নিজস্ব প্রতিবেদক »
প্রবেশমুখ দিয়ে প্রবেশ করতেই ময়লা পানি জমে আছে। ময়লা পানির উপরে দেয়া হয়েছে বালির বস্তা। বস্তা অতিক্রম করেই যেতে হয় পার্কের মূল জায়গায়। ভেতরে বাইরে ছড়িয়ে আছে ময়লা-আর্বজনা। কোনদিকেই নেই সীমানা প্রাচীর। পার্কের মাঝখানে উঁচু জায়গায় বর্ণিল ফুলের গাছ শোভা পেলেও, আবর্জনার দুর্গন্ধে ম্লান হয়ে গেছে ফুলের সুগন্ধ। তার মাঝেও ৮-১০ দর্শনার্থী সবুজ ঘাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। গতকাল বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখা যায় নগরীর পাচঁলাইশের এলাকার জাতিসংঘ পার্কে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্তব্যরত এক পাহাদার বলেন, রাত হলে এখানে মাদকসেবী বেড়ে যায়। কিছু বলা যায় না। কিছু বললেই আমাদের ওপর তেড়ে আসে।
চারপাশে দুগর্ন্ধের মধ্যে এই পার্ককে বসে আড্ডা দিতে কেমন লাগছে? এমন প্রশ্নের জবাবে আড্ডারত দুই যুবক আরাফাত ও সানি বলেন, আশেপাশে আর কোনো জায়গা নেই। এ শহরে খোলা জায়গার খুব অভাব। ময়লা হলেও কিছুক্ষণ সময় কাটানো যায়। পার্কটি অনেকদিন ধরে এভাবে পড়ে আছে।
পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মোবাশ্বের আহমেদ বলেন, কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুইটি সুইমিংপুল পড়ে আছে। সাঁতার কেটে শরীরচর্চা তো করা যায় না, বরং ভিতরে হাঁটার জন্যও যাওয়া যায় না। এখন পুরোটাই অকেজো হয়ে গেছে।
পার্ক উন্নয়নের বিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রামের পাচঁলাইশ গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহেদুন নবীর সঙ্গে। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, পার্ক উন্নয়নের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে গণপূর্ত বিভাগে প্রস্তবনা পাঠানো হয়েছে। বায়েজিদ উদ্যান কিংবা জাম্বুরি পার্কের আদলেই পার্কটি উন্নয়ন করা হবে।
উল্লেখ্য, নগরীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র জাতিসংঘ পার্ক নিয়ে বিরোধ চরমে উঠেছিল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মধ্যে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং সিটি কর্পোরেশন উভয়ই এটির মালিকানা দাবি করে উন্নয়ন করতে চায়। বিরোধের কারণে পার্কটির উন্নয়ন হয়নি। বরং দীর্ঘদিন ধরে এতে পড়ে আছে আবর্জনার স্তূপ। গতবছর গণপূর্ত বিভাগ সিটি কর্পোরেশন পক্ষ থেকে অনাপত্তিপত্র পেলেও এখনো কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি পার্কটিতে। অবহেলায় পড়ে আছে পাঁচলাইশ জাতিসংঘ পার্কটি।
নগরীর জনসংখ্যার তুলনায় বিনোদনকেন্দ্র যথেষ্ট অপ্রতুল। এর মাঝে পার্কটি বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ অবসরে নির্মল সময় কাটানো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ১৯৬৪ সালে গণপূর্ত বিভাগ পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় এক একর জায়গায় পার্কটি গড়ে তোলে। ২০০২ সালে এটি জাতিসংঘ পার্ক নামকরণ করা হয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্কের একাংশে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রস্থের দুটি সুইমিং পুল এবং সাত হাজার বর্গফুটের একটি জিমনেশিয়াম নির্মাণ করা হয়। অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে একজনের মৃত্যুও ঘটে। এরপর থেকে এটি পরিত্যক্ত।
মশা আর ময়লার স্তূপ জাতিসংঘ পার্কে
সন্ধ্যা হলেই জমে মাদকের আড্ডা