চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কাঞ্চননগরে গণপিটুনিতে মো. রিহান উদ্দিন মাহিন (১৪) নামের এক কিশোর নিহতের ঘটনায় আবার আলোচনায় এসেছে মব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর হওয়ার দাবি। এই নৃশংস ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
নিহত মাহিন কাঞ্চননগর উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও মুদি দোকানি লোকমানের ছেলে। স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে মাহিন ও তার দুই বন্ধু মানিক ও রাহাত চট্টগ্রাম শহর থেকে ফিরছিল। রাত ৩টার দিকে গ্রামে পৌঁছালে ৭-৮ জন তাদের চোর সন্দেহে ধাওয়া করে। কিশোরেরা দৌড়ে একটি নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় নিলে সেখান থেকে ধরে এনে সেতুর ওপর বেঁধে নির্মমভাবে পেটানো হয়। ঘটনাস্থলেই মাহিন মারা যায়।
মানিক ও রাহাত গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আহমদ বলেন, ‘আমরা মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। ছেলেটিকে চোর আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরিবার মামলা করার কথা জানিয়েছে। পুলিশ মূল হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।’
সম্প্রতি ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভে ৩’-এর ফলাফলে দেখা গেছে, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ ‘মব’ (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) সহিংসতা নিয়ে উৎকণ্ঠিত। নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন ৬১ শতাংশ মানুষ, যাঁদের ৫৬ শতাংশ পুরুষ আর ৬৬ শতাংশ নারী। পোশাকের জন্য রাস্তাঘাটে হয়রানি নিয়ে উৎকণ্ঠিত ৬৭ শতাংশ মানুষ। তাদের ৬৩ শতাংশ পুরুষ আর ৭১ শতাংশ নারী।
কয়েকদিন আগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়ন, সংস্কার, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা নিয়ে’ জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। বিআইজিডি ও সংস্কারবিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জরিপের ফল তুলে ধরেন বিআইজিডির ফেলো অব প্র্যাকটিস সৈয়দা সেলিনা আজিজ। তিনি জানান, গত ১ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত সময়ে এই জরিপের জন্য গ্রাম ও শহরের নানা শ্রেণি-পেশার ৫ হাজার ৪৮৯ জন মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। তাঁদের ৫৩ শতাংশ পুরুষ, ৪৭ শতাংশ নারী; ৭৩ শতাংশ গ্রামের ও ২৭ শতাংশ শহুরে।
উত্তরদাতাদের মধ্যে উচ্চমধ্যবিত্ত ও বিত্তবানেরা ছিলেন না, মতামত দিয়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা। জরিপে রাজনীতি, অর্থনীতি, চলমান সমস্যা, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে টেলিফোনে প্রশ্ন করে মতামত জানতে চাওয়া হয়। এর আগে অক্টোবরের তথ্যের ভিত্তিতে গত ডিসেম্বরে বিআইজিডির দ্বিতীয় পালস সার্ভের ফল প্রকাশ করা হয়েছিল।
এ মুহূর্তে দেশের প্রধান সমস্যা কী—এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে জরিপে ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা বলেছেন।
সরকার পরিবর্তনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। আশা করা গিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি দ্রুত সামাল দিতে পারবে। কিন্তু তা হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কাজেই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
এ মুহূর্তের সংবাদ