নিজস্ব প্রতিবেদক »
বোয়ালখালী, পূর্ব পটিয়া এলাকার লাখো মানুষের যোগাযোগের ভরসা কালুরঘাট সেতু। এ সেতু নিয়ে ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। সেতু পুনর্নিমাণে প্রস্তাবনা থাকলেও তা কার্যকর হওয়ার আগে সেতু সংস্কার করে শুধু রেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাই জনদুর্ভোগ লাঘবে সেতুর নিচে ফেরি চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তিনটি ফেরি নিয়ে আসা হলেও টোল নির্ধারণ জটিলতায় সেগুলো কয়েকমাস ধরে পড়ে আছে। সড়ক ও জনপদের টোল প্রস্তাবনা নিয়ে প্রায় চারমাস পর বৈঠকে বসবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
ফেরির টোল প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, ‘কালুরঘাট সেতু সংস্কার কিংবা পুনর্নিমাণে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তার আগে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেতুতে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য তিনটি ফেরি আনা হয়েছে। সেগুলো কালুরঘাট সেতু এলাকায় রাখা হয়েছে। এরমধ্যে দুটি ফেরি চালু থাকবে। একটি রিজার্ভ থাকবে। নদীর দুপাশে দুটি অস্থায়ী জেটি, অ্যাপ্রোচ ও বেইলি সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া সওজের নীতিমালা অনুযায়ী যানবাহনের ফেরি ব্যবহারের ভাড়ার তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর ফেরি চলাচল শুরু হবে।’
চট্টগ্রামের সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) জানায়, বোয়ালখালী অংশে ফেরি চলাচলের জন্য ঘাট নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর পূর্ব মোহরা বা শহরের অংশে ব্যয় করা হয়েছে ২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
ফেরির মালিকরা জানান, একটি ফেরিতে ১২টি ট্রাক, ৯টি গাড়ি ও শতাধিক মানুষ পার হতে পারবে। একটি ফেরি এক পার থেকে অপর পারে যেতে সময় লাগবে ১৫ মিনিট। এসব ফেরিতে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, অসুস্থ রোগীবাহী যানবাহন ও সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি অগ্রাধিকার পাবে।
ইতোমধ্যে এ সেতু দিয়ে ভারী গাড়ি চলাচল না করতে হাইট ব্যারিয়ার দেওয়া হয় ৬ মার্চ। ফলে যান চলাচলে কিছু সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
সেতুর সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা হয় বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. আব্দুল মোমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কালুরঘাট সেতু নিয়ে আমরা খুবই আশাহত। আমাদের একটাই চাওয়া, তা হলো- এ সেতু নির্মাণে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই। এছাড়া ফেরি দিয়ে সাময়িক দুর্ভোগ কমানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ফেরিও কবে চালু হবে তা জানি না।’
অন্যদিকে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজে তোড়জোড় শুরু হয়েছে রেলওয়েতে। এ প্রসঙ্গে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘মাস দুয়েকের মধ্যে সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হতে পারে। ইতোমধ্যে দরপত্র ছাড়ার সব রকমের কাজ শেষ হয়েছে।
আশা করছি, এ মাসে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। রেললাইনে কাজ শুরু করলে ওখানে যান চলার মতো অবস্থা থাকবে না। কিন্তু মানুষের দুর্ভোগ কমাতে যে ফেরিগুলো আনা হয়েছে, সেগুলো কবে চালু করবে তা তো আমরা জানি না। সড়ক ও জনপদ ফেরি চলাচল কার্যক্রম দ্রুততার সাথে করলেই ভালো হয়।’
রেলসূত্রে জানা যায়, ১২ অ্যাক্সেল লোডের কালুরঘাটের বর্তমান সেতু দিয়ে ১৫ অ্যাক্সেল লোডের ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। সেজন্য রেলওয়ে বুয়েটের পরামর্শে সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বুয়েটের পরামর্শক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে রেলওয়ে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন ইতোমধ্যে দিয়েছে। এছাড়া আরও দুটি প্রতিবেদন এ মাসে জমা দিবে।
চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপদের কর্মকর্তারা জানান, টোল নির্ধারণ না হওয়ার কারণে ফেরি চলাচল শুরু হচ্ছে না। কিন্তু এ টোল নির্ধারণী প্রকটি প্রস্তাবনা সওজ নীতিমালা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা তারা জানেন না।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা কালুরঘাট সেতুর নিচে ফেরি চলাচলে টোল নির্ধারণী একটি প্রস্তাবনা পেয়েছি। শাহ আমানত সেতুর টোলের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা করে এ টোলে কিছু পরিবর্তন করতে হবে। দু’একদিনের মধ্যে বৈঠকে আমরা কাজটি শেষ করবো। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে টোল নির্ধারণ করা হবে। টোল নির্ধারণ হলে ফেরি চলাচলে আর কোনো বাধা থাকবে না।’