সাধারণ মানুষ অসুখ বা রোগ বলতে বোঝে শারীরিক সমস্যাকে। মানসিক সমস্যাও যে একটি রোগ এবং তারও যে চিকিৎসার দরকার সে কথা বোঝে না অধিকাংশ মানুষ। পাগল ছাড়া মানসিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার মনে করে না এরা। দেহের রোগের সঙ্গে মনের রোগেরও যে নিয়মিত চিকিৎসার দরকার তা অনুধাবন করে না অধিকাংশ মানুষ। অবশ্য মানসিক চিকিৎসার ক্ষেত্রেও রয়েছে যথেষ্ট অপ্রতুলতা।
দেশে যখন মানসিক রোগ নিয়ে এই ধারণা ও অপ্রতুল অবস্থা, তখন দেশের এক প্রান্তের সরকারি হাসপাতালের একটি কক্ষে এলাকার মানুষের মনের স্বাস্থ্য ঠিক করার উদ্যোগ নিয়েছে আইসিডিডিআরবি। এ উদ্যোগের সঙ্গে আছে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সরকারের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। উদ্যোগটি ইতিমধ্যে প্রশংসা পেতে শুরু করেছে। সারা দেশে এ রকম ছয়টি কেন্দ্র আছে আইসিডিডিআরবির। সরকার উদ্যোগটির ব্যাপ্তি বাড়ানোর কথা ভাবছে বলে জানা গেছে। তা যদি হয় তাহলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে বিবেচিত হবে।
সর্বশেষ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ (২০১৯) বলছে, দেশের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছে। পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে মানসিক রোগ বেশি। মানসিক রোগের মধ্যে বিষণ্নতা, উদ্বেগ এসবের প্রকোপ বেশি। মানসিক রোগের প্রকোপ শহরে ও গ্রামে প্রায় সমান।
মানসিক রোগের প্রকোপ উদ্বেগজনক পর্যায়ে থাকলেও চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেশ অনেক পিছিয়ে। মানসিক রোগ থাকা ৯১ শতাংশ মানুষ চিকিৎসার বাইরে আছে, অর্থাৎ তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নেয় না বা হাসপাতালে যায় না। মানুষ ‘পাগল’ ভাববে এই বিবেচনা থেকে বহু মানুষ চিকিৎসা এড়িয়ে চলে। এ ছাড়া দেশে মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে কোনো না কোনো মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভুগছে এক কোটির বেশি মানুষ। বড় অংশই জানে না যে তাদের সমস্যা আছে। দেশে মানসিক রোগের চিকিৎসার হাসপাতালের ঘাটতি আছে। জনবলের সংকটও তীব্র। চিকিৎসা যা আছে, তা মূলত রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আইসিডিডিআরবির এ উদ্যোগ ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও প্রান্তিক মানুষের মনের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এই কেন্দ্রগুলো তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ উদ্যোগের বিস্তারে যুক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আইসিডিডিআরবি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও ১৪টি মন–স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করেছে। যশোরে ছয়টি, চাপাইনবাবগঞ্জে চারটি ও বান্দরবানে চারটি কেন্দ্র। এগুলো এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রমক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই উদ্যোগটি খুবই কার্যকর। মানুষ সেবা পাচ্ছে। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জায়গার সংকট আছে। সেটি বিবেচনায় রেখেই আমরা এই উদ্যোগের বিস্তারের কথা সক্রিয়ভাবে চিন্তা করছি।’
রোবেদ আমিন আরও জানান, পঞ্চম স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে পৃথক ও নতুন একটি কর্মপরিকল্পনা (অপারেশনার প্ল্যান) তৈরি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। সেই কর্মপরাকল্পনার মাধ্যমে দেশব্যাপী ধীরে ধীরে মন–স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিস্তার ঘটানো হবে।
দেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে আইসিডিডিআরবির বিশাল অবদান আছে। বিশেষ করে মহামারিকালে এই সংস্থার কার্যক্রম মানুষের ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে। অবহেলিত মানুষের মানসিক চিকিৎসায় এগিয়ে আসার জন্য এই সংস্থাকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগেরও প্রশংসা করি আমরা।
এ মুহূর্তের সংবাদ