নিজস্ব প্রতিবেদক »
বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। উপজেলার তুলনায় আক্রান্ত বেশি হচ্ছে নগরে। হাসপাতালেও রোগীর চাপ বাড়ছে। তবে চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের দাবি, ভবন মালিকদের অযতেœর ছাদবাগানের কারণে ডেঙ্গু বাড়াচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে বসবে চসিক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মানুষ।
হালিশহর বি ব্লক এলাকার বাসিন্দা মমিনুল জানান, মশার উৎপাত বেড়েছে। কিন্তু কোনো মশা ডেঙ্গু রোগ সৃষ্টি করবে তা তো জানি না। তবে সিটি করপোরেশন এতো কিছু করার কথা থাকলেও তাদের কিছু করতে দেখলাম না। সিটি করপোরেশন একটু আন্তরিকভাবে মশা মারার ওষুধ ছিটালে নগরবাসীকে এমন সমস্যা পোহাতে হতো না।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান ও সচেতনতামূলক নির্দেশনা প্রচার করছি। সোমবার নগরের সাগরিকা ও পাঁচলাইশ এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ ভবন মালিকরা ছাদ বাগান করেছে। কিন্তু তা রক্ষণাবেক্ষণ বা যতœ নিচ্ছে না। ছাদ বাগানের টবে পানি জমে থাকছে। ফলে এডিস মশা বংশবিস্তার করছে। এছাড়া এসির জমে থাকা পানিতেও মশা বংশবিস্তার করছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন অফিসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়। সেই মাসে ১৯ জন আক্রান্ত হওয়ার পর জুলাইয়ে ৬৪ জন, আগস্টে ১১৪ জন, সেপ্টেম্বরে ৬০১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। তবে অক্টোবরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বিগত মাসের তুলনায় তিনগুণ বেড়ে শনাক্ত হয় ১ হাজার ৮৬১ জন। এর মধ্যে নগর এলাকায় অক্টোবরে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৩৫৬ জন ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৫০৫ জন। চলতি বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৫৯ জন। এরমধ্যে নগরে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৪৭ জন ও উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৭১২ জন। এ পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাও যথাযথভাবে দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে যাদের অবস্থা গুরুত্বর হয়ে পড়ছে তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যালে পাঠানো হচ্ছে।’
ডেঙ্গু প্রতিবেদন পাওয়ার পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, হাসপাতালের তৃতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ড ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগীতে পরিপূর্ণ। শয্যাসহ মেঝেতেও ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দাসহ সিঁড়ির পাশ পর্যন্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হলেও সেখানে কোনো ডেঙ্গু রোগী রাখা হয়নি। ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে মশারি টাঙিয়ে।
চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. চৌধুরী ফরহাদ বলেন, ‘আমাদের শয্যার তুলনায় রোগী বরাবরই বেশি। এরপরও ডেঙ্গু চিকিৎসার নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের মশারির ভেতরে রেখেই চিকিৎসা দিচ্ছি। তবে অনেকে নিয়ম মানতে চান না। এ বিষয়ে অবগত। কড়া নজরদারিও রেখেছি।’
জানা যায়, গত দুই বছরের চেয়েও এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছর ডেঙ্গুর ১, ৩ ও ৪ সেরোটাইপে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। একাধিক সেরোটাইপে সংক্রমণ ঘটায় ডেঙ্গু বেশি ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য তারা জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্দ্রতা কমে আসার পাশাপাশি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে।
আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা প্রদানে কোনো রকমের বেগ পেতে হচ্ছে কিনা জানতে চেয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা দিতে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। তবে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার যেভাবে বাড়ছে, এটি অবশ্যই চিন্তার কারণ। এ নিয়ে ৩ তারিখ (নভেম্বর) টাইগার পাসের সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ে মেয়রের উপস্থিতিতে একটি সভা আয়োজন করা হচ্ছে। এতে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালের পরিচালকসহ স্বাস্থ্যসেবায় সংশ্লিষ্ট সবাই উপস্থিত থাকবেন।