পরে ফেরত, দালাল গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
রামুতে ওজনে কম দেয়ার অভিযোগে একটি ফিলিং স্টেশনকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন।
আর প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের হাতে রশিদ দেয়া হয় ২০ হাজার টাকা। অভিযানকারী কর্মকর্তা এবং তার নিজস্ব দালাল ভাগ করে নিলেন ১ লাখ টাকা। এ বিষয় জানাজানি হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ওই কর্মকর্তা ভুক্তভোগীর হাতে ফেরত দিলেন ১ লাখ টাকা। এ ঘটনায় ইমরানের নিজস্ব দালাল হিসেবে পরিচিত মো. রিদুয়ানকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাব কার্যালয়ে এসে জরিমানার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি জানান ভুক্তভোগী রামুস্থ নাহার ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। এসময় তিনি জরিমানা টাকা আত্মসাতের বিষয়ে প্রমাণাদি হিসেবে মুঠোফোনের কল রেকর্ড এবং ভিডিও চিত্রও দেন।
নাহার ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন নেতৃত্বে একটি দল নাহার ফিলিং স্টেশনে আসে। এসময় তার সঙ্গে কিছু আনসার সদস্য আর রিদুয়ান নামের এক ব্যক্তি ছিলেন। পরে সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন একটি জ¦ালানি তেলের পরিমাপ যন্ত্র নিয়ে পরিমাপ করেন এবং সামান্য ক্রটি রয়েছে বলে ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দেয়। পরে অফিসে যোগাযোগের জন্য বলা হয়।
তিনি আরও জানান, এরপর একই দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে আসলে সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন অফিসে ছিলেন না। পরবর্তীতে মুঠোফোনে কল করলে সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন ১ লাখ টাকা রিদুয়ানকে এবং ২০ হাজার টাকা অফিসে জমা দিতে বলেন। তারপর রিদুয়ানকে ডেকে তার হাতে ১ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়। আর বাকি ২০ হাজার টাকা অফিসের ভেতরে গিয়ে এক কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়ে একটি রশিদ সংগ্রহ করি। পরবর্তীতে অফিসের কর্মকর্তা ২০ হাজার রশিদ দেয়ায় সন্দেহ হয়। তাই এর পরদিন বুধবার পুনরায় রিদুয়ানকে ১ লাখ টাকা দেয়ার বিষয়টি মুঠোফোনে কথোপকথনের মাধ্যমে রেকর্ড করি আর সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসাইনের সঙ্গে কথা বলে তারও কল রেকর্ড করি।
নাহার ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আরও বলেন, বিষয়টি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টায় অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান স্যারের কক্ষে আমি ও সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন যাই। এসময় প্রথমে মো. ইমরান হোসাইন বিষয়টি অস্বীকার করার চেষ্টা করে। কিন্তু পরবর্তীতে কল রেকর্ড শোনার পর ১ লাখ টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তার মধ্যে রিদুয়ানকে ১০ হাজার টাকা এবং মো. ইমরান হোসাইন ৯০ হাজার টাকা নেন বলেও স্বীকার করেন। একই সঙ্গে ১ লাখ টাকাও ফেরত দেয়া হয়।
এ ঘটনার পর পর বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন এর সাথে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
দালাল হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ রিদুয়ানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ে আসলে সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসাইন এর সাথে ক্যাব প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অভিযানে যান। ওখানে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
পরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি শুনেছেন। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগকারী, কর্মকর্তার সাথে সরাসরি আলাপ করার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, অভিযোগকারী, দালাল এবং মো. ইমরান হোসাইন এর উপস্থিতিতে অভিযোগটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনায় রিদুয়ানকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসাইনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লিখিতভাবে জানানো হচ্ছে।