নিজস্ব প্রতিবেদক »
আসন্ন কোরবানের ঈদকে ঘিরে আবারও সক্রিয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে নগরীতে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল মসলা। এমনিতে নিত্যপণ্যের চড়া বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠছে। তার মধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আশায় মসলায় কাপড়ে ব্যবহৃত বিষাক্ত রঙ, দুর্গন্ধযুক্ত পটকা মরিচের গুঁড়া (নি¤œমানের মরিচ) ধানের তুষ, ইট ও কাঠের গুঁড়া, মটর ডাল ও সুজি ইত্যাদি মেশাচ্ছেন।
এদিকে বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি প্রশাসন মাঠে থাকলেও এসব অসাধু ব্যবসায়ীকে ঠেকানো যাচ্ছে না। যার ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ নানাভাবে মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন বলে ভোক্তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল মসলা উৎপাদনকারী গুঁড়া মরিচের সঙ্গে মেশাচ্ছেন ইটের গুঁড়া। হলুদে দেয়া হচ্ছে মটর ডাল, ধনিয়ায় স’মিলের কাঠের গুঁড়া ও পোস্তা দানায় ব্যবহৃত হচ্ছে সুজি। মসলার রঙ আকর্ষণীয় করতে বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল রঙ মেশানো হচ্ছে। এর কারণে গুঁড়া মরিচের এবং হলুদের রঙ আরও গাঢ় হয়। মসলার ওজন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ধানের ভুসি। অসাধু চক্র প্রথমে গোপন কারখানায় ভেজাল মসলা উৎপাদন করে। পরে তা প্যাকেটজাত করে খোলাবাজারে সরবরাহ করে। তারা কিছু প্যাকেট ছাড়া, কিছু সাধারণ প্যাকেটে এবং কিছু নামিদামি কোম্পানির লেভেল লাগিয়ে মসলাগুলো বিক্রি করেন।
মঙ্গলবার (২৩ মে) সকালে নগরীর চাক্তাই এলাকায় র্যাবের ভেজালবিরোধী এক অভিযানে মসলাজাত পণ্যের সাথে ভেজাল রাসায়নিক দ্রব্যের মেশানোর প্রমাণ মেলে। এসব কর্মকা-ের সাথে জড়িত ১০ ব্যবসায়ীকে আটক করে র্যাব।
অভিযানে চাকতাই এলাকার জসিমের ক্রাসিং মিলে ভেজাল রঙমিশ্রিত প্রায় ৬শ’ কেজি হলুদ, মরিচ ও ধনিয়া গুঁড়া এবং ১২ কেজি ভেজাল রঙ ও রাসায়নিক পদার্থ জব্দ করা হয়েছে।
এসব কর্মকা-ে জড়িত গ্রেফতার ব্যবসায়ীরা হলেন- জসিম ক্রাশিং মিল মালিক মো. জসিম উদ্দিন (৪০), মো. শরীফ হোসেন (৪০), মো. আলাউদ্দিন (৩৬), মো. জিলানী (২০), মো. সুজন (১৯), মো. সাইদুল (২০), আবদুল কাদের (৩৮), মো. সজল (৪৩), মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৮) ও মো. কামরুল হাসান (২৫)।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. নুরুল আবছার বলেন, ভেজাল মসলা তৈরি ও বাজারজাতকরণের সাথে জড়িত গ্রেফতারকৃতরা মসলা ব্যবসায়ী ও বাজারজাতকারী। তারা দীর্ঘদিন ধরে পরস্পর যোগসাজশে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের মসলাসহ মরিচের গুঁড়ার সাথে বিভিন্ন রঙ ও রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে ভেজাল মসলা তৈরি করে আসছেন। তাছাড়া তারা এসব ভেজাল মসলা চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন বাজার ছাড়াও, আশপাশের বিভিন্ন জেলায় পাইকারদের মাধ্যমে বিক্রয় করে আসার কথাও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
আসন্ন কোরবানের ঈদকে ঘিরে অসাধু ব্যবসায়ীরা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠছে। এতে মসলার বাজারে নানারকম নিত্যপণ্যের দামে কারসাজি ও পাশাপাশি ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক পর্দাথ মিশিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীকে ঠেকাতে তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে বলে মনে করেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ।
প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, শুধু মসলা নয়। বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলো যখনই অভিযান চালায় তখনই নিত্যপণ্যে ভেজাল, পণ্যের দর নির্ধারণে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট আমরা দেখতে পায়। এসব ভেজাল খাবার কিনে ক্রেতারা শুধু প্রতারিতই হচ্ছেন না, এতে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। বাজার তদারকিতে প্রশাসনের তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর যথেষ্ট অবহেলা রয়েছে।
খাতুনগঞ্জে মসলা কিনতে আসা আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যাংকারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শুক্রবারে পারিবারিক অনুষ্ঠান রয়েছে। এখানের দোকানগুলোতে অনেকটা সস্তা পাওয়া যায়।
আসন্ন কোরবানের ঈদকে ঘিরে প্রয়োজন অনুসারে বাজার তদারকি করবেন বলে জানায় প্রশাসনের তদারকি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার ও জেলা প্রশাসন।
বাংলাদেশ স্টান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এর উপপরিচালক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, মসলাসহ নিত্যপণ্যের ভেজাল এখন শুধু নগরীতে না। দেখা যায় প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিতে এখন অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদেও ব্যবসায়ে গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চল বেঁচে নিয়েছে। তবে আমাদের তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সমন্বয় করে অভিযান চলমান রয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোক্তা অধিকার চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, আমাদেরকে কেউ সংবাদ দিলে যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের নিয়মিত বাজার তদারকি রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, খাদ্যে ভেজাল রোধ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।