পটিয়ার কৈয়গ্রাম সেতু
বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া :
পটিয়ায় একটি গার্ডার সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। উপজেলার জিরি ইউনিয়নে শিকলবাহা খালের উপর নির্মাণাধীন কৈয়গ্রাম সেতুর কাজ ইতোমধ্যে ৪৩% শেষ হয়েছে। সেতুর উভয় পাড়ের জায়গার হুকুম দখলের টাকা পরিশোধ না করায় স্থানীয়দের চাপে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে ফিরে গেছেন। তবে পূর্বের টেন্ডার বাতিল করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মঙ্গলবার পুনরায় টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, সেতুর উভয় পাড়ে যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তার টাকা এখনো ক্ষতিগস্তদের পরিশোধ করা হয়নি। অথচ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের এলএ শাখায় ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা এলজিইডি নির্দিষ্ট সময়ে হস্তান্তর করেছে। কিন্তু এলএ শাখার কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলার কারণে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ হয়নি বলে অভিযোগ। যার কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের দখলীয় ভূমি ঠিকাদারকে হস্তান্তর করেনি। পটিয়ার জন্য বৃহৎ এ সেতুর পূর্ব পাড়ে বেশকিছু কাজ হলেও পশ্চিম পাড়ের জায়গা ঠিকাদারকে হস্তান্তর না করায় প্রায় ১ বছর ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। অনেকে এই সেতু ওই এলাকায় অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন। কারণ ওই খালের উপর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের ভেল্লাপাড়া ব্রিজ নামের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ রয়েছে।
এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শিকলবাহা খালে পাকিস্তান আমলে একটি স্ট্রিল ব্রিজ ছিল। ওই সেতুটি কৈয়গ্রাম সেতু হিসেবে পরিচিত। স্ট্রিল ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার পর স্থানীয়রা নৌকা দিয়ে চলাচল করতেন। বর্তমান সরকার উপজেলার জিরি ইউনিয়নের শিকলবাহা খালের উপর ২০১৭ সালে এলজিইডির অর্থায়নে ৩৯০ মিটারের একটি গার্ডার সেতু নির্মাণকাজ শুরু করে। সেতু নির্মাণকাজের জন্য শুরুতে ৪১ কোটি ২৫ লাখ ৪২ হাজার ২৭৮ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আল-আমিন কনস্ট্রাকশন তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড জেভি নির্মাণকাজের কার্যাদেশ পান। সেতুর পূর্ব পাড়ে কাজের গতি থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা নিয়ে ঠিকাদার খালের পশ্চিম পাড়ে কোন কাজ করতে পারেনি। ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর পটিয়ার স্থানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। পূর্বের ঠিকাদারকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা বিল দেওয়া হয়েছে বলে এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে অসমাপ্ত কাজের জন্য নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আরো ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জিরি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কৈয়গ্রাম এলাকার বাসিন্দা মো. জাহিদুল হক জানিয়েছেন, সেতুর পূর্ব পাড়ে তাদের ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এলএ শাখা থেকে কোন টাকা পরিশোধ করেনি। কয়েকদিন আগে এলএ শাখা থেকে একটি নোটিশ প্রদান করেছে। সেতুর পূর্ব পাড়ে ৫শ বসত ঘর ও পশ্চিম পাড়ে ২শ বসতঘর রয়েছে। গত একবছর ধরে সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এলজিইডির পটিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ দত্ত জানিয়েছেন, উপজেলার শিকলবাহা খালের উপর পিসি গার্ডার সেতুর বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন (বিআইডাব্লিউটিএ) খালের ওয়াটার লেভেলের রিপোর্ট দেওয়ার পর এলজিইডির অর্থায়তনে সেতুটি নির্মাণের জন্য টেন্ডার হয়। সেতুর কাজ ইতোমধ্যে ৪৩% শেষ হয়েছে। পূর্বের টেন্ডার বাতিল করে সম্প্রতি নতুনভাবে ৩০ কোটি টাকার টেন্ডার করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের টাকা নির্দিষ্ট সময়ে এলজিইডি থেকে এলএ শাখায় হস্তান্তর করা হলেও কেন ক্ষতিগ্রস্তদের পরিশোধ করেনি তা জানা নেই।