ভূমিকম্পের পর তিব্বতে ৪০ বার আফটারশক

মৃত অন্তত ৫৩, ক্ষতিগ্রস্ত ৮ লক্ষ

তিব্বতে ভূমিকম্পের পরের পরিস্থিতি। ছবি: সংগৃহীত।

সুপ্রভাত ডেস্ক »

৭.১ মাত্রার জোরালো ভূমিকম্পের পর তিব্বতে অন্তত ৪০ বার আফটারশক বা কম্পন অনুভূত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তিব্বতে ৫৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৬২ জনকে। ভূমিকম্পের ধাক্কা কাটিয়ে শুরু হয়েছে উদ্ধারের চেষ্টা। হতাহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকালে ৭.১ তীব্রতার জোরালো ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তিব্বত। যার প্রভাব পড়ে নেপাল, ভুটান এবং ভারতেও। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শিগাতসের এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত আট লক্ষ মানুষ। ভূমিকম্পের উৎসস্থল তিব্বতের তিংরি প্রদেশে। এই অঞ্চলটিকে এভারেস্টের উত্তরের প্রবেশদ্বার হিসাবে দেখা হয়।

প্রথম জোরালো ভূমিকম্পের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতে পর পর কম্পন (আফটার শক) হতে থাকে ওই অঞ্চলে। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, প্রথম ভূমিকম্পের পর ৪০টিরও বেশি কম্পন হয়েছে ওই অঞ্চলে। তার মধ্যে ১৬টি কম্পনের মাত্রা ছিল ৩-এর বেশি। ভূমিকম্পের পর বেশ কিছু ভিডিয়োও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। তবে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে রয়টার্স। তারা জানিয়েছে, ওই ভিডিয়োটি তিব্বতের লাৎসে শহরের কাছে। ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, রাস্তার ধারে দোকান ভেঙে পড়েছে। ধ্বংসাবশেষ ছড়িয় ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে রাস্তার উপর। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভূমিকম্পের উৎসস্থলের কাছাকাছি অঞ্চলে প্রচুর ভবন ভেঙে পড়েছে।

সাধারণত এই ধরনের জোরালো মাত্রার কোনও ভূমিকম্পের জেরে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা শিংহুয়া জানিয়েছে, সরকারি আধিকারিকেরা ভূমিকম্পের জেরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ জানার চেষ্টা করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলির হতাহতের সংখ্যা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন।

তিব্বতে ভূমিকম্পের উৎসস্থল থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। সেখানেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। প্রাণ ভয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন কাঠমান্ডুর বাসিন্দারা। ভুটানের রাজধানী থিম্পু এবং উত্তরপূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে, বিশেষ করে বিহার, উত্তরবঙ্গ, সিকিমের মতো জায়গাগুলিতে কম্পন অনুভূত হয়েছে। তিব্বতের ভূমিকম্প বাংলাদেশও অনুভূত হয়েছে।

এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরেও ৬.৪ মাত্রার জোরালো ভূমিকম্প হয়েছে নেপালে। সেই বারের ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয় হিমালয়ের কোলে থাকা এই পাহাড়ি দেশে। ২০০৮ সালে দক্ষিণ পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের এক ভূমিকম্পে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৫ সালে নেপালের কাঠমান্ডুর কাছেও ৭.৮ মাত্রার এক জোরালো ভূমিকম্প হয়। তাতে প্রায় ৯ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন কয়েক হাজার মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে সেটিই নেপালের সব চেয়ে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প ছিল। নেপাল, উত্তরপূর্ব ভারত এবং দক্ষিণপশ্চিম চীনে মাঝেমধ্যেই ভূমিকম্পের খবর পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, এই অঞ্চলে ভারতীয় পাতের সঙ্গে ইউরেশীয় পাতের সংঘর্ষের প্রবণতার কারণে এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের আশঙ্কা বেশি থাকে।