ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে দুর্ভাবনা বাড়ছে

২০২২ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৬৫টি অগভীর ভূগর্ভস্থ পানির পর্যবেক্ষণ কূপের ৪০ বছরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়। বিশ্লেষণে দেখা যায়, পানির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে দেশের দুই তৃতীয়াংশ এলাকার ভূগর্স্ত পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে এক থেকে তিন মিটার পর্যন্ত পানি স্তর নেমে যাচ্ছে।
‘দ্য গ্যাঞ্জেস ওয়াটার মেশিন কোয়ান্টিফায়ের ফ্রম পিজামেট্রে ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় পানির পুনর্ভরণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি কূপের পানিস্তর নামছে। পুনর্ভরণ প্রায় হচ্ছে না।১৯৭০ থেকে ২০২০ সাল-এ সময়ের পানির স্তর ও পুনর্ভরণ চিত্র উঠে আসে গবেষণায়।রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পানিস্তর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৮০-এর দশকে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নামলেও বর্ষায় পুনর্ভরণ হতো ১৬ থেকে ১৮ মিটার। কিন্তু ২০১০ সালের পর পুনর্ভরণ ১৬ মিটারের বেশি হচ্ছে না।গাজীপুরের কালীগঞ্জে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ৬ মিটার পুনর্ভরণ হতো। কিন্তু ২০১৫ সালের পর থেকে পুনর্ভরণ ৩ মিটারে নেমে গেছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী দোহারে বর্ষার সময় পুনর্ভরণ ৩ মিটারে নেমে গেছে। এটি ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৪ মিটার ছিল।ঢাকা কিংবা বরেন্দ্র অঞ্চলের বাইরের পরিস্থিতিও নাজুক। যেমন শেরপুর ও যশোরে পুনর্ভরণ এক দশক আগের চেয়ে যথাক্রমে ২২ থেকে ২০ মিটারে এবং ২০ থেকে ১৮ মিটারে নেমেছে।গবেষকদের একজন বলেন, দেশের প্রায় কোথাও পুনর্ভরণের সুষম চিত্র দেখা যাচ্ছে না। ভূগর্ত থেকে পানি কেবল উঠছে, আর মাটির তল ফাঁকা হচ্ছে। পানির কৃত্রিম পুনর্ভরণ এখন দ্রুত করতে হবে।
বিগত সরকারের সময় ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’-এ ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্ভরণকাজ এগিয়ে নিতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি এবং একটি কৌশলপত্র তৈরি করা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার এই পরিকল্পনা এগিয়ে নেবে কি না সে বিষয়ে পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পুনর্ভরণ দরকার। তবে মাটিতে পানি ইনজেক্ট করাটা আমি বন্ধ করতে চাই। কে, কী ধরনের পানি দেবে, তাতে দূষণ সৃষ্টি হতে পারে। পানির উত্তোলনে লাগাম টানতে চাই।’

রিজওয়ানা হাসান যে শঙ্কার কথা বলেছেন, তা রোধে ‘দূষণমুক্ত পানির নিয়ন্ত্রিত কৃত্রিম পুনর্ভরণ’ নিশ্চিত করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য একক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তাদের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়ার কথাও আছে পরিকল্পনায়; কিন্তু বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেই।
কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানির আধার ফুরিয়ে আসছে সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কাজেই এখন থেকে ব্যবস্থা না নিলে নদীমাতৃক বাংলাদেশে একদিন পানিও আমদানি করতে হতে পারে।