ভুগর্ভস্থ পানি দিয়ে লবণ চাষ, কুতুবদিয়াকে বাঁচান

২০১৭ সালে কুতুবদিয়ায় ভূগর্ভের পানি তোলার জন্য নলকূপ বসানো হয় ২৩টি। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ৪৫, ২০১৯ সালে হয় ১৩৫, ২০২০ সালে ৩০৯, ২০২১ সালে ৪৫০, ২০২৩ সালে ৭৫৪ ও ২০২৪ সালে নলকূপের সংখ্যা বেড়ে হয় ৯৬০। আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নলকূপের সংখ্যা হয়েছে ১ হাজার ৫৫০-এর বেশি। বিভিন্ন সূত্রের অনুমান বলছে, নলকূপগুলো দিয়ে দৈনিক ৫০ লাখ গ্যালন লোনাপানি তোলা হচ্ছে এবং তা ক্রমে বাড়ছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার নলকূপ বসানো হয়েছে অবৈধ প্রক্রিয়ায়। একটি নলকূপও উচ্ছেদ হয়েছে বলে জানা যায়নি।
এত নলকূপ বসানোর কারণ হলো, ভূর্গভস্থ পানি থেকে লবণ উৎপাদন। এই প্রক্রিয়ায় লবণ উৎপাদন আইনত নিষিদ্ধ হলেও বাধা দেওয়ার কেউ নেই।

বাংলাদেশ পানি আইন-২০১৩ অনুযায়ী নদী, হ্রদ, মোহনা, উপকূলীয় জল ও ভূগর্ভস্থ জলের সুরক্ষা, উন্নতি এবং টেকসই ব্যবহারের জন্য সমন্বিত পদ্ধতি রয়েছে। দেশের ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে সব ধরনের পানির মালিকানা (যেমন ভূপৃষ্ঠের পানি, ভূগর্ভস্থ পানি, সমুদ্রের পানি, বৃষ্টির পানি এবং বায়ুমণ্ডলীয় পানি) জনগণের পক্ষে সরকারের। পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে জলসম্পদ আহরণ, বিতরণ, ব্যবহার, উন্নয়ন, সুরক্ষা এবং সংরক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয় না। নদী ও খাঁড়িগুলোর প্রাকৃতিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো কাঠামো নির্মাণের অনুমতি দেওয়াও হয় না। কিন্তু কুতুবদিয়ায় এই নিয়ম মানছে না কেউ। অনুমোদন ছাড়াই দেড় হাজারের বেশি নলকূপ পুঁতে – লাখ লাখ গ্যালন লোনাপানি তুলে সর্বনাশ ডেকে আনলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নীরব থাকছেন।

পরিবেশবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনিতে সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া মারাত্মক ঝুঁকিতে। তার ওপর হাজারো গভীর নলকূপের মাধ্যমে দৈনিক ৫০ লাখ গ্যালনের বেশি ভূগর্ভস্থ লোনাপানি উত্তোলন হচ্ছে লবণ চাষের জন্য। এক মৌসুমে কুতুবদিয়ায় ৩ লাখ টন লবণ উৎপাদন করে যে লাভ হচ্ছে, পরিবেশ ধ্বংসের কারণে কৃষি, স্বাস্থ্যসহ নানা পেশার লাখো মানুষের ক্ষতি হচ্ছে দশ গুণ বেশি। কাজেই আত্মঘাতী এই প্রবণতা বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।