নিজস্ব প্রতিবেদক »
মাপিয়া বেগম (৫৫)। আগ্রাবাদের বেপারী পাড়ার বাসিন্দা। অনেক বছর আগে স্বামী মারা যান। দিনমজুরি করে সংসার চালিয়ে একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই বছর আগে শরীরে বাসা বাঁধে জরায়ু ক্যান্সার। শরীরের অবস্থা দিন দিন অবনতি হতে থাকে। কাজ করতে না পারায় ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নেন। ভিক্ষা করে যা টাকা পায় এবং মানুষের সাহায্যের অর্থ দিয়ে খাওয়া-চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ অবস্থায় এবার সমাজসেবা অধিদপ্তরের আর্থিক সহায়তায় তার মুখে ফুটলো হাসি।
গতকাল সকাল ১০টায় সার্কিট হাউজে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত নগরের ৯০ রোগীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রত্যেক রোগীকে ৫০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়।
অর্থ সহায়তা পেয়ে মাপিয়া বলেন, ‘আমি এখন কাজ করতে পারি না। ভিক্ষা করে দিনে আনি, দিনে খায়। আশপাশের মানুষ এবং ভিক্ষা করে আমার খাওয়া-চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছে। সরকারের দেয়া এই অর্থ আমার চিকিৎসার কাজে আসবে।’
জানা গেছে, সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়া দীর্ঘ দিন ধরে অর্থ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এই সংখ্যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিলো ৫৬১ জন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার জনে। সারা দেশে এই অর্থ বছরে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। চট্টগ্রামে এবার প্রথম কিস্তিতে ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম জেলা-উপজেলায় ৩৫০ জন রোগীকে ৫০ হাজার করে অর্থ প্রদান করা হয়েছে। এবার মহানগরীতে ৯০ জনেক অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে- ক্যান্সারে ৩৯ জন, কিডনির ১২ জন, স্ট্রোক প্যারালাইজড ১৮ জন, লিভার সিরোসিসে ৮ জন, জন্মগত হৃদরোগের ৭ জন, ও থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ৬ জন রয়েছেন।
আর্থিক সহায়তা প্রদানের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, ‘সিয়াম সাধনার মাসে গরিব দুস্থ রোগীদেরও সহায়তা করতে হবে। কেননা অনেক রোগী চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত ক্যান্সার, কিডনি রোগীসহ বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো- চট্টগ্রামের মানুষের ভোজনরসিক। অতিরিক্ত গরু মাংস, কালা ভুনা, অতিরিক্ত শুটকি খাওয়াও বাড়াচ্ছে জটিল রোগ। সুস্থ থাকতে হলে এই খাবার কমাতে হবে। একই সাথে শরীরচর্চায় মনোযোগ দিতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসহায় রোগীদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই সহায়তা দিয়ে রোগীরা সেবা চালিয়ে নিতে পারবেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় চট্টগ্রামের কথা ভাবেন। তাঁর জন্য চট্টগ্রামে ক্যান্সার ভবন, চীনের সহায়তায় বার্ন ইউনিট করা হচ্ছে। এতে এ অঞ্চলের গরিব রোগীরা উপকৃত হবেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক কাজী নাসিমুল ইসলাম বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে অস্থির বিশ্ব। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়েছে। কিন্ত সরকার রোগীদের বরাদ্দ কমিয়ে দেয়নি। বরং তা বাড়ানো হয়েছে। যাতে করে গরিব রোগীরা চিকিৎসা করাতে পারে। এ সময় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল আলমও উপস্থিত ছিলেন।